ওয়েব ডেস্ক: আসানসোল শহর রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল। কল-কারখানার ধোঁয়া আর সাইরেনের শব্দে শুরু হয় এই শহরের মানুষের দিন। শ্রমিক নির্ভর এই শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের খতিয়ান খাতার পাতায় হিসেব কষে নির্ধারিত হয়।
রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে এবারেও কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসানসোল।
এক কথায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে প্রেস্টিজ ফাইট হতে চলেছে আসানসোল কেন্দ্রে।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ফুটেছিল পদ্মফুল। বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে আটকাতে এবার মরিয়া চেষ্টা তৃণমূলের।
তবে এই কেন্দ্রে লড়াই মূলত চতুর্মুখী। আসানসোল কেন্দ্রে লড়াইয়ে রয়েছে বামেরাও। কংগ্রেসও লড়াইয়ে রয়েছে, তবে তাদের সংগঠন বলতে কিছুই নেই।
বাঁকুড়া কেন্দ্রে ৯ বারের বিজয়ী সিপিআইএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে হারিয়ে রাজনীতির আঙিনায় উঠে আসেন বাঁকুড়ার বিদায়ী সাংসদ মুনমুন সেন। পদ্ম শিবিরে আঘাত হানতে এবার তাঁকেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজনৈতিক দলগুলি কী কী প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে জানতে আজ আরপ্লাস নিউজের নজরে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র।
আসানসেল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা
বিজেপি- বাবুল সুপ্রিয়
তৃণমূল কংগ্রেস- মুনমুন সেন
সিপিআইএম- গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়
কংগ্রেস- বিশ্বরূপ মণ্ডল
ভারতের ৩৯তম তম জনবহুল এই মহানগরের পুরনিগমের দায়িত্বে আছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ৭টি বিধানসভার মধ্যে রানিগঞ্জ-জামুরিয়া বাদে ৫টি নিজের দখলে রেখেছে তৃণমূল। আসালসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর আইন,জনস্বাস্থ্য ও শ্রম দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
বর্তমান এই কেন্দ্রের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় বহু ভাষাভাষীর মানুষের বাস এই লোকসভা কেন্দ্রে। রাজ্যে পালাবদলের সবুজ রঙ লাগলেও আসানসোল ২০১৪ থেকে গোরুয়া শিবিরের দখলে।
৫ বছর পার করে ফের একটা লোকসভা নির্বাচন। গেরুয়া শিবিরের মতে বাবুল সুপ্রিয়র হাত ধরেই আসানসোলের মানুষ উন্নয়নের মুখ দেখেছেন। এই তথ্য মানতে নারাজ তৃণমূল। তাই শাসক বিরোধী তরজা এখানে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সীমাবদ্ধ।
শেষ চালে কিস্তিমাত দিতে এই কেন্দ্রে ভোটযুদ্ধের ময়দান দখলে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। ঘাসফুল, জোড়াফুল নাকি অন্য কোন দল? কে আসবে আসানসোলের আগামী দিনের উন্নয়নের কারিগর হয়ে? এর চাবিকাঠি রয়েছে জনতা জনার্দনের হাতে।
সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যায় আরপ্লাস নিউজ। শতাব্দী প্রাচীন বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার শ্রমিকদের বক্তব্যে উঠে এলো ঢালাও প্রতিশ্রুতির শেষে বঞ্চনার কাহিনী।
তাদের দাবি, কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর কঠিন সমস্যার মধ্যে রয়েছে বহু পরিবার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে একাধিকবার জানিয়েও সদুত্তোর পায়নি তারা। কারখানা খোলা বা বিকল্প কোন ব্যবস্থা কিছুই করেননি বাবুল এমনটাই বক্তব্য তাদের। একথায় প্রতিশ্রুতি পালন হয়নি তাদের। আসানসোলে বন্ধ হয়ে আছে এরকম অনেক কারখানা।
উন্নয়ন-অনুন্নয়নের খতিয়ান নিয়ে আরপ্লাস নিউজের মুখোমুখি হলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী মুনমুন সেন।
তাঁর কথায়, এর আগেও নির্বাচনী প্রচারে জনসভায়, এমনকি কেন্দ্রে বিভিন্ন কাজে মহিলাদের বিশেষ ভূমিকায় পাশে পেয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক কাজে মহিলাদের এগিয়ে আসাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। এলাকার উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাঁকুড়ার মানুষের মতো আসানসোলের মানুষেরও জলের দাবি পূরণ করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন অবশ্যই সম্ভব। আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সকলের কাছে জল অবশ্যই পৌঁছে যাবে। ভোটে জয়ী হলে সাংসদ তহবিলের টাকায় বেকারত্ব মেটাতে কর্মসংস্থান গড়ে দেওয়া হবে।” পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়টিও বিশেষ নজরে রাখছেন মুনমুন সেন।
অন্যদিকে বিদায়ী সাংসদ তথা গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র কথায়, তৃণমূল পুরনিগমের দায়িত্বে থেকেও এলাকার উন্নয়নে কোন কাজ করেনি। ক্ষমতার লোভে তৃণমূল ভোট লুঠের রাজনীতি করছে বলেও দাবি করেন বাবুল সুপ্রিয়।
বিজেপি জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ হাসপাতাল তৈরিতে বিশেষ সহায়তা করেছেন। দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্য বিমা পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। সে কারণে অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা দলে দলে যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। তাঁর কথায় আসানসোল কেন্দ্রে বাবুলের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সিপিআইএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এই কেন্দ্রে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার কেউ কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। তাই মানুষ এবার বিকল্প শক্তিকে বেছে নিতেই ভোট দেবে।
এই কেন্দ্রের সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তা সত্ত্বেও আসানসোলের বুকে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দগদগে ক্ষত। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার হতাশা, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মুনমুন সেনের তরফে ঢালাও প্রতিশ্রুতি। এমন আবহেই এবার আসানসোলে ভোট। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুই ভোট নয়, ঘাসফুল ও পদ্মফুল দুই সিবিরের কাছেই এই কেন্দ্র প্রেস্টিজ ফাইট।