Date : 2024-04-20

২৯ বছর পর আস্তাকুঁড়ের “মৃত সদ্যজাত কন্যা” কেবিসির মঞ্চে….

ওয়েব ডেস্ক: জন্মের সময় নিথর সদ্যজাতের শরীর মৃত ভেবে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কথায় আছে “রাখে হরি মারে কে”, শেষ পর্যন্ত তবে হরি রাখলেন, শুধু রাখলেনই না, দুনিয়ার সামনে নজির সৃষ্টি করে দিয়ে বোঝালেন আস্তাকুঁড় থেকে উঠে এসে “কৌন বানেগা ক্রোড়পতি”র হট সিটে বসে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা জিতে নেওয়া যায়। কানপুরের নূপুর চৌহন করে দেখালেন দুনিয়াকে।

আজ থেকে ২৯ বছর আগে কানপুরের সরকারি হাসপাতালে পরিবারের সদস্যদের মৃত সন্তানের প্রসবের খবর দেয় চিকিৎসকরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। একরত্তির দেহ ফেলে দেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালের আস্তাকুঁড়ে।

আরও পড়ুন : ঝুলিতে আইআইটির এম.টেক ডিগ্রি, কাজ করেন রেলের ট্র্যাকম্যানের!

হঠাৎ-ই সেই মৃতদেহে প্রাণের স্পন্দন লক্ষ্য করেন এক আত্মীয়। আস্তাকুঁড় থেকে তুলে এনেই চিকিৎসা করা হয়। প্রাণ ফিরে পায় শিশু কন্যা। চিকিৎসকদের জন্যেই জন্মের পর সময় নষ্ট হওয়ার কারণে পঙ্গুত্ব বাসা বাঁধে মেয়েটির শরীরে।

আরও পড়ুন : ভারতে প্রথমবার ১৬৩জন মহিলা বাসচালকদের নিয়োগ করে নজির গড়ল মহারাষ্ট্র

আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব সঙ্গী হয়ে যায় তার। কে জানতো, সেদিন কপালের ফেরে বেঁচে যাওয়া সেই পঙ্গু মেয়েটিই ডাক পাবে “কৌন বানেগা ক্রোড়পতি”র হট সিটে। অমিতাভ বচ্চনের পরিচালনায় দেশের অন্যতম নামী টেলিভিশন গেম শোতে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা পেয়ে যায় ২৯ বছরের মেয়েটি। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় সে। হাঁটার জন্য দুটি পা জন্ম থেকেই নিথর হয়ে আছে। তবে নিজের জেদেই কখনও হুইল চেয়ারে বসেনি নূপুর।

ওয়াকিং স্টিকের মাধ্যমেই চলাফেরা করেন তিনি। ৯ জন প্রতিযোগিকে পরাজিত করে কৌন বানেগা ক্রোড়পতির হট সিটে বসার সুযোগ ছিনিয়ে নেয় সে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অমিতাভ বচ্চন নিজে তাকে বসিয়ে দেন হট সিটে। উন্নাও জেলার বাসিন্দা, বিহাগপুরের নূপুর উত্তর দিয়েছেন ১২টি প্রশ্নের। জিতে নিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখ টাকা। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অমিতাভ বচ্চন নিজেও। কুর্নিশ জানান নূপুরের জীবনকে। এর পরে অমিতাভ প্রশ্ন করেন, নূপুর কেন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন না।

নূপুর উত্তর দেন, “স্যার, এক বার যদি আমি হুইলচেয়ারে অভ্যস্ত হয়ে যাই, আমি আর কোনও দিন হাঁটতেই পারব না। চেষ্টাই করব না। তাই শত অসুবিধাতেও আমি জোর করে হাঁটার চেষ্টা করি।” এই উত্তর আরও এক বার বিস্মিত করে দেয় অমিতাভ বচ্চনকে এবং দর্শকদেরও। নূপুরের বাবা পেশায় কৃষক রামকুমার সিং ও তাঁর মা কল্পনা দেবী স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত তাঁদের মেয়ের এই কীর্তিতে। কল্পনা দেবী বলেন, “ও পড়াশোনায় ভাল ছিল প্রথম থেকেই।

শারীরিক অসুবিধা ওকে পিছিয়ে রাখেনি কখনও। ও শিক্ষিকা হতে চেয়েছিল, প্রথম সুযোগে বি-এড পরীক্ষায় পাশও করে। এখন ও নিজে এক জন শিক্ষক, স্কুলে পড়ায়। তার পরেও বিকেলে মাঠে গরিব ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে টিউশন দেয়।”অসামান্য মনের জোর মানুষকে সমস্ত অসাধ্য সাধন করে পৌঁছে দিতে পারে শিখরে, নূপুরের মতো মেয়েরা তার উদাহরন স্বরূপ।