Date : 2024-04-20

স্মৃতির মাইল ফলক আঁকড়ে আজও পুরনো রেডিও টিউন করেন সুজাতা….

কলকাতা: ১৯৭৪ সাল আকাশবাণীর রেকর্ডিং স্টুডিওতে মহালয়ার সকালে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল “মহিষাসুরমর্দিনী”। না, বরাবরের মতো নয়, রেকর্ডিং স্টুডিও-তে উপস্থিত ছিলেন বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমার। ভোর ৪টে-য় সম্প্রচার শুরু হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ল কল্লোলিনী কলকাতা। নেই সেই পরিচিত কন্ঠস্বর, নেই সেই আবেগ, নেই চোখে জল আনা সংস্কৃত শ্লোকের সুদৃঢ় উচ্চারণ।

আকাশবাণী ভবনের সামনে ইট ছুঁড়তে বাকি রেখেছিল সেদিন উত্তেজিত জনতা।

আরও পড়ুন : নিভৃতেই তাঁকে স্মরণ, বিদ্যাসাগরের তৈরি এই স্কুলের পথ ভুলেছে শহর

উত্তর কলকাতার রামধর মিত্র লেনের বসত বাড়ি থেকে সেদিন আকাশবাণী ভবনে মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রপাঠ করতে যাননি বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। ইনি এমনই এক বাঙালি শুধুমাত্র একটি বেতার অনুষ্ঠানের ভাষ্যপাঠের জন্য অমর হয়ে আছেন অসংখ্য বাঙালির মনে।

আজ পর্যন্ত মহালয়ার চণ্ডীপাঠের কোন অনুষ্ঠানই ছাপিয়ে যেতে পারেনি তাঁর সৃষ্টিকে। অনেকেই বলেন চণ্ডীপাঠের আগে গঙ্গাস্নান করতেন তিনি। তারপর গরদের চাদর মুড়ে বসতেন চণ্ডীপাঠ করতে। উত্তর কলকাতার সুতানুটি সরু গলি দিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ৭ নম্বর রামধর মিত্র লেনের সেই বাড়ি। তাঁর জন্য বাঙালি আজও অনাদরে পড়ে থাকা রেডিওটির ধুলো ঝেড়ে টিউন করে কলকাতা ‘ক’। স্মৃতির মাইল ফলকে আজও তিনি উজ্বল।

গোটা জীবনটাই তিনি অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে কাটিয়েছেন উত্তর কলকাতার এই বাড়িতে। প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ হয়েছে, বছরে একবার মহালয়ের সময় নয়, বরং যখন ইচ্ছেই আপনি গুগল, ইউটিউবের দৌলতে শুনে নিতে পারেন “মহিষাসুরমর্দিনী”। তেমনই অতীত হয়েছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের স্মৃতি। একসময় তাঁর বাড়ির ঠাকুরদালানে পুজিত হতেন মহিষমর্দিনী, সময়ের ঘোরে রঙ চটেছে ঠাকুর দালানের। শেষ কবে সেখানে রঙের প্রলেপ পড়েছে মনে করতে পারছেন না বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের বড় মেয়ে সুজাতা ভদ্র। যে কন্ঠ অম্লান সৃষ্টি রেখে গেছে বাঙালির দুর্গোৎসবের অন্তরে। আজও তার কন্ঠস্বর পবিত্র করে মহালয়ার ভোরকে। অথচ অনাদরেই পড়ে আছে তার বসত ভিটে।