ওয়েব ডেস্ক: পাতা ঝরানো শৈত্যের শেষে বাঙালীর ক্যালেন্ডারে আসে মাঘের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথি। শীতের আমেজে ঝলমলে মিঠে রোদের পরশ মেখে বাগদেবীর বন্দনা। হলুদ শাড়ি, পাঞ্জাবিতে কৈশোরের প্রথম বসন্তে উষ্ণ আহ্বান। সমবেত কণ্ঠে মন্ত্রধ্বনীতে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও সঙ্গীতের আরাধনায় ব্রতী হন বাঙালীরা। ঋকবেদে বর্ণিত আছে, শব্দ ব্রহ্ম স্বরূপ যে দেবীর কল্পনা করা হয়েছে তিনি সরস্বতী। শুধু হিন্দু শাস্ত্রেই নয়, জ্ঞান স্বরূপ বাগদেবীকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে আরাধনা করা হয়। বিশেষত, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিদ্যার দেবী হিসাবে বন্দনা করা হয় মা সরস্বতীকে। একনজরে দেখে নিন কোন দেশে মা সরস্বতী কি কি রূপে পূজিত হন।
মায়ানমার বা বার্মা:
মায়ানমার বা বার্মায় জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী হিসাবে পূজিত হন দেবী সরস্বতী। তবে দেবী সরস্বতী এখানে থুরাথাডি নামে পরিচিতা। মহাযান বৌদ্ধধর্ম অনুযায়ী থুরাথাডি পুরনো পুঁথিপত্র সংরক্ষণ করেন। দেবী সরস্বতী চতুর্বেদ ও পুরাণ পুঁথির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি বেদমাতা সুর, শব্দের উৎস। একইভাবে মায়ানমারে থুরাথাডি জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
জাপান:
জাপানে এই দেবীকে বেনজাইতেন বলা হয়। দেবীর হাতে ম্যান্ডোলিন জাতীয় একটি বাদ্যযন্ত্র। তিনি সুর ও সঙ্গীতের অধিষ্ঠাত্রী। দুটি স্ট্রিং ইন্সট্রুমেন্ট দুই ভিন্ন দেশের দেবীর হাতে দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় দেবী সরস্বতীর মতো বেনজাইতেনও জ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও অন্যান্য ললিত কলার পৃষ্ঠপোষক। সম্ভবত ভারত থেকে চিন হয়ে জাপানে প্রচলিত হয় সরস্বতীর আরাধনা। সম্ভবত ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে জাপানে এই দেবীর পুজো শুরু হয়। জাপানের হাসেদারা মন্দিরে আছে বেনজাইতেন গুহা। যেখানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য জাপানি সরস্বতীর মূর্তি। দেবী জাগ্রত, তাই এখানে অনেকেই গোপনে নিজের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করার প্রার্থনা দেবীকে জানিয়ে আসেন।
কমবোডিয়া:
কম্বোডিয়ায় আংকর ভাট মন্দিরে গেলে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর আদলে কিছু প্রাচীন মূর্তি আপনার নজরে আসবে। দীর্ঘকাল ধরে এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজারা রাজত্ব করতেন। দশম ও একাদশ শতাব্দীর একটি পুঁথি থেকে জানা যায় সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রহ্মা ও সরস্বতীর পুজো করা হত। এই অঞ্চলে খেমার বংশের কবিরা দেবী সরস্বতীর গুনগান করতেন। কামবোডিয়ায় দেবী সরস্বতীকে বিবাহিত গণ্য করা হয়। বলা হয় প্রজাপিতা ব্রহ্মা হচ্ছেন দেবীর স্বামী। কামবোডিয়াতে এই দেবীকে বাগেশ্বরী ও ভারতী বলে ডাকা হয়। বিশেষ করে খেমার সাহিত্যে রাজা যশবর্মণের রাজত্ত্ব কালে এই নাম দুটোরই উল্লেখ আছে।
থাইল্যান্ড:
থাইল্যান্ডে দেবী সরস্বতীর বর্ণ সবুজ আভা যুক্ত। এখানেও জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী হিসাবে আরাধনা করা হয় সরস্বতীকে। তবে হংসের বদলে ময়ূর এখানে দেবীর বাহন।
ইন্দোনেশিয়া:
পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া অথচ আমেরিকায় সেই অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের সামনে দেবী সরস্বতীর মূর্তি দেখা যায়। জ্ঞানের স্মারক হিসাবে দেবী সরস্বতীর মূর্তি দেখা যায় দূতাবাসের সামনে। বালি দ্বীপে বসবাসকারী হিন্দুরা দেবী সরস্বতীর আরাধনা করেন। ইন্দোনেশিয়ায় একটি বিশেষ দিন দেবী সরস্বতীর নামে রাখা হয়েছে। এই দিনটিকে বলা হয় ডে অফ সরস্বতী। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ এই দিনে পুঁথি, পত্রকে ফুল, ফল, ধুপ-ধুনো সহযোগে আরাধনা করা হয়।
তিব্বত:
টিবেট বা তিব্বতে এই দেবীকে বলা হয় ইয়াং চেন মা বা সঙ্গীতের দেবী। তিব্বতীয় তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে দেবীকে এখানে ২১ জন তারার একজন বা দেবী মঞ্জুশ্রীর সঙ্গী হিসেবে বর্ণনা করা হয়।