তিনি ছিলেন বৈষ্ণব জগতের একজন সিদ্ধ পুরুষ । তিনি ছিলেন ১০৮ শ্রীমৎ রামদাস বাবাজী মহারাজের শিষ্য । তিনি ছিলেন বাঁকুড়া জেলার জেলা শহর বাঁকুড়ার নূতনগঞ্জে অবস্থিত “শ্রীশ্রীনিত্যানন্দ আশ্রম”-এর প্রাণ পুরুষ । সেই নিত্যানন্দ আশ্রমেই অনুষ্ঠিত হলো আশ্রমের প্রাণ পুরুষের জন্ম শতবর্ষ পূর্তি স্মরণ উৎসব । যাঁর নাম “কৃষ্ণচৈতন্য দাস বাবাজী” ।
পরম সিদ্ধ পুরুষ ১০৮ শ্রীমৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী’র জন্ম ইংরাজী’র ১৯২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া’র কবিরাজ বংশে । তাঁর পিতা ছিলেন কবিরাজ হরিপদ দাশগুপ্ত এবং মাতা ছিলেন সুকেশিনী দাশগুপ্ত । হরিপদ ও সুকেশিনী’র পুত্র কৃষ্ণচৈতন্য দাশগুপ্ত ছিলেন বাড়ীর ছোট সন্তান তথা অষ্টম গর্ভের সন্তান । তাঁর দাদা ছিলেন কবিরাজ নবনীরদ দাশগুপ্ত এবং পাঁচ দিদি ছিলেন যথাক্রমে অপর্ণা, গৌরাঙ্গিনী, রাধারাণী, অনঙ্গমঞ্জুরী ও বিলাসমঞ্জুরী (আরো একজন অতি অল্প বয়সেই মারা যান) ।
বাড়ির ধারা মেনে কৃষ্ণচৈতন্য দাশগুপ্ত আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় উচ্চশিক্ষা লাভ করতে কলকাতায় গিয়ে সেখানকার “শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ”-এ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন । উচ্চশিক্ষা লাভের পর বাঁকুড়া’য় ফিরে এসে শহরের রবীন্দ্র সরণীতে স্থাপন করেন “বারানসী নাথ আয়ুর্বেদ ভবন” নামে এক চিকিৎসালয় । অতি অল্প সময়েই কৃষ্ণচৈতন্য দাশগুপ্ত একজন চিকিৎসক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন তবে চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি মগ্ন হয়ে পরেন ভাগবত পাঠ, কীর্তন ও ভগবৎ-তত্ত্বের আলোচনায় ।
অন্যদিকে তখন ১০৮ শ্রীমৎ রামদাস বাবাজী মহারাজ কলকাতা থেকে বাঁকুড়ায় এলে উঠতেন বাঁকুড়া শহরের ওই কবিরাজ বাড়িতেই । বাবাজী মহারাজ কৃষ্ণচৈতন্য দাশগুপ্ত’কে আদর করে “ছটাকী কবিরাজ” বলে ডাকতেন । পরবর্তী সময়ে এই বাবাজী মহারাজের কাছেই দীক্ষা গ্রহণ করেন কৃষ্ণচৈতন্য দাশগুপ্ত । আরও কয়েকবছর পরে তিনি সন্ন্যাস জীবনে প্রবেশের মানসিক প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ১০৮ শ্রীশ্রীশীতলদাস বাবাজী মহারাজের কাছে ত্যাগমন্ত্র গ্রহণ করে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী নাম ধারণ করে বাঁকুড়া’র নূতনগঞ্জের শ্রীশ্রীনিত্যানন্দ আশ্রম-এর প্রথম মহন্ত হন । ১৯৯৮ সালের ২৪ জানুয়ারী তিনি অনন্তধামে গমন করেন ।
সেই শ্রীশ্রীনিত্যানন্দ আশ্রমেই মহাসমারোহে পালন হলো ১০৮ শ্রীমৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী মহারাজের “জন্ম শতবর্ষ পূর্তি স্মরণ উৎসব” । গত ১৪ এপ্রিল এই স্মরণ উৎসবের সূচনা হয় শ্রীমদ্ভাগবত পাঠের মধ্যে দিয়ে । মূল অনুষ্ঠান ছিল ২১, ২২ ও ২৩ এপ্রিল তিন দিন ব্যাপী । ২১ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যায় ছিল স্মরণসভা, শুভ অধিবাস, বৈষ্ণব আরাধনা ও খোলমঙ্গল । শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী মহারাজের স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধু-বৈষ্ণব ও বাবাজী মহারাজরা । বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন শ্রীবৃন্দাবনের শ্রীশ্রীরাধাকুণ্ডধামের শ্রীরাধারমন ভজনাশ্রমের অধ্যক্ষ মহারাজ শ্রীমৎ পণ্ডিতজী রাধাচরণ দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীশ্রীনিত্যানন্দ আশ্রম বাঁকুড়ার অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বিশ্বম্বরদাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীধাম নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুর শ্রীমহাপ্রভুর জন্মস্থান আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ অদ্বৈতদাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীবৃন্দাবনধাম শ্রীশ্রীগোবিন্দকুন্ডু শ্রীশ্রী রজনীদাস বাবার আশ্রমের শ্রীমদ্ভাগবত পাঠক শ্রীমৎ সনাতনদাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীধাম নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুর শ্রীকৃষ্ণকলিকুঞ্জ আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ব্রজমোহন দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীশ্রীমা যোগমায়া সেবাশ্রম আড়াল বাঁশীর অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তমালকৃষ্ণদাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীশ্রীএকচক্রাধাম শ্রীশ্রীনিতাই বাড়ি আশ্রমের ভারপ্রাপ্ত নরোত্তম দাস, শ্রীধাম নবদ্বীপ শ্রীশ্রীসমাজবাড়ি আশ্রমের শ্রীমৎ জনার্দনদাস বাবাজী ও শ্রীমৎ বিশ্বম্ভরদাস বাবাজী, বাঁকুড়া’র মোলডুবকা থেকে আগত সোমেশ্বর গোস্বামী, বাঁকুড়া’র কাঁকিলা থেকে আগত নিত্যগোপাল ঠাকুর গোস্বামী, বাঁকুড়ার স্বনামধন্য কবিরাজ তথা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজীর মহারাজের ভাইপো রামানুজ দাশগুপ্ত, বাঁকুড়া’র শ্রীশ্রী কুসুম হরনাথ মন্দিরের অধ্যক্ষ এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরসুন্দর মল্লিক, পশ্চিম মেদনীপুরের চন্দ্রকোনা শ্রীশ্রীনিতাই গৌরাঙ্গ আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রাধাকান্তদাস বাবাজী মহারাজ প্রমুখ ।
১০৮ শ্রীমৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী মহারাজের “জন্ম শতবর্ষ পূর্তি স্মরণ উৎসব”-এর মূল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ২২ এপ্রিল সোমবার ছিল ভোরে অষ্ট প্রহরের শুভারম্ভ, দুপুরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধু বৈষ্ণবদের নিয়ে সাধুসেবা এবং সন্ধ্যায় বাঁকুড়া শহরে নগর কীর্তন । তৃতীয় দিন ২৩ এপ্রিলের মূল আকর্ষণ ছিল “৬৪ মহান্তের ভোগ” এবং দুপুরে প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ১০৮ শ্রীমৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদাস বাবাজী মহারাজের শিষ্য মাধবদাস বাবাজী পরিবেশিত লীলা কীর্তন ।
তিন দিনের মূল অনুষ্ঠান শেষের পরদিন অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল থেকে সন্ধ্যায় পুনরায় শুরু হয়েছে শ্রীমৎ সনাতনদাস বাবাজী মহারাজের কণ্ঠে “শ্রীমদ্ভাবত পাঠ” । এই পাঠ চলবে ১৪ মে পর্যন্ত ।
আরো পড়ুন: ৩ মে মাদ্রাসার ফলপ্রকাশ