সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক: অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। শনিবার রাতভর রণক্ষেত্র অবস্থার পর রবিবার সকাল থেকেও সার্বিক চিত্র একই রকম। এদিন সকাল থেকে অশান্তি বেড়েছে কয়েকগুন। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ- বিক্ষোভ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। রণমূর্তি বিক্ষোভকারীদের থামাতে মারমুখী পাক পুলিশ ও পাকিস্তান সিকিউরিটি ফোর্স। তাঁদের বিরুদ্ধে এলোপাথারি গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। রবিবার পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর ও একাধিক সাধারণ মানুষের জখম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অশান্তি আগেও ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে জল, বিদ্যুতের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি চড়া রাজস্ব; একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে মারমুখী জনতা। এমনকী ওই এলাকায় উৎপন্ন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে। সম্প্রতি ওই এলাকার মানুষ পাকিস্তান থেকে “আজাদী”-র দাবিতেও সরব হন। দাবির পরই পাক সরকার ওই এলাকার জন্য আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
মূল অশান্তির সূত্রপাত হয় শুক্রবার। অস্বাভাবিক হারে রাজস্ব বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতিসহ একাধিক বিষয়ের বিরুদ্ধে সরব হয় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনতা। পাক সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগকে সামনে রেখে শনিবার একটি প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয়
জম্মু ও কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি।
বাজার- দোকান বন্ধ রাখার আর্জি জানানো হয়। তবে এই মিছিল রুখতে মরিয়া ছিল পাক প্রশাসন। বিক্ষোভকারীদের থামানোর প্রচেষ্টাই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পাকিস্তানের আধা সেনা ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। রবিবার দাদিয়াল তহসিল ও মিরপুর জেলায় একই অভিযোগকে সামনে রেখে বড় মিছিল বের হয়। সেখান থেকে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে টানতে টানতে নিয়ে যায় পাক পুলিশ। এরপর পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর আকার নেয়। পুলিশ মিছিল আটকানোর চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একাধিক গাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছোঁড়ে। পরে আধা সেনা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল অর্থাৎ মুজফফরাবাদসহ সামাহনি, সেহানসা, মিরপুর, রাওয়ালকোট, হাত্তিয়ান বালা, খুইরাট্টা, তত্তপানি এলাকায় ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের অগস্ট মাস থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিদ্যুতের খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দৈনন্দিন জিনিসের দামও আকাশছোঁয়া। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কর। সব মিলিয়ে দিনের পর দিন ফুঁসছিল। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যার ফলস্বরূপ রণক্ষেত্র আকার নিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর।
আরও পড়ুন : স্বস্তি দিয়েছে বৃষ্টি