নির্ঝঞ্ঝাট, নিরুপদ্রব ভোট পরিচালনার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ভালো রাজ্যের তকমা পেলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। বুধবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকেই পশ্চিমবঙ্গের ভুয়সী প্রশংসা করেন দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- তৃতীয় দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আরও চার দফা। বাকি চার দফার নির্বাচন প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে বুধবার বৈঠক করেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, সেখানেই রাজ্যের সিইও আরিজ আফতাবের কাজের ভুয়সী প্রসংশা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
প্রথম তিন দফায় রাজ্যের দশটি আসনের ভোট হয়ে গিয়েছে। এই ভোটে এক নজিরবিহীন ছবি দেখেছে রাজ্যবাসী। যে রাজ্যে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচন তো বটেই, এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচন বা সাধারণ সমবায়িকা নির্বাচনেও হিংসা, গন্ডগোল, বোমাবাজি, মাথা ফাটাফাটি, রক্তারক্তি কান্ড, বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, রিগিং, খুন এসব একদম জলভাত, সেখানে দশটি আসনের ভোট হয়ে গেলো অথচ একটাও বোমা গুলির খবর নেই। প্রায় আট থেকে দশ হাজার বুথের ভোট হয়ে গেলেও একটাও বুথ দখল, ছাপ্পা বা রিগিং এর অভিযোগ করেনি কোনোও দল। এতো পুরো তাজ্জব করে দেওয়া ঘটনা। মনে রাখতে হবে এই দশটি আসনের মধ্যে অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড অনুযায়ী কোচবিহার বা মুর্শিদাবাদের ডোমকল এর মতো জায়গা ছিলো। যে এলাকাগুলো ভোটের দিনের হিংসা নিয়ে কুখ্যাত। এসব এলাকা থেকে তেমন বড় কোনো অভিযোগ না আসায় কমিশন যথেষ্টই স্বস্তিতে। বাকি দফা গুলোর জন্যেও প্রস্তুতিতে কোনো ঢিলে ভাব দিতে রাজি নয় সিইও দফতর।
চিরাচরিত হিংসার ছবি বদলে দিয়ে যে নজির কমিশন গড়েছে, বাকি দফাগুলোতেও সেটাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তারা। কি জাদুবলে এমন হিংসা হীন ভোট করাতে পারছে কমিশন ? কমিশনের দফতরের এক আধিকারিককের কথায়, প্রথম কথা হলো এবার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। একেবারে বুথ ধরে ধরে সেই হিসাব করা হয়েছিলো। সাধারণত ট্র্যাডিশন অনুযায়ী কোন কোন এলাকার কোন কোন বুথে গন্ডগোল হয় তার তালিকা তৈরি করে ভোটের আগে থেকেই সেখানে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। দুই, পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী কে মোবিলাইজ করার কাজ এবার অনেক সুষ্ঠুভাবে করা হয়েছে।
অনেক বেশি সংখ্যক কিউআরটি (ক্যুইক রেসপন্স টিম) ভ্যান রাখা হয়েছে যাতে কোনোও এলাকায় গন্ডগোলের খবর আসামাত্রই সেখানে তারা পৌঁছে অবস্থা আয়ত্বে আনতে পেরেছে। তিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একশো শতাংশ বুথ ওয়েব কাস্টিং এর আওতায় আনা। সিইও দফতরে আলাদা করে মনিটরিং টিম প্রতিক্ষণ সেই দিকে নজর দিয়ে ছিলো। কোনও বুথে একটু অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে সিইও দফতর থেকে ফোন চলে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট সেক্টর অফিসার বা কমান্ডিং অফিসারের কাছে। এমনকি সিইও আরিজ আফতাব ও ভোটের দিন একদম সকাল থেকেই এলাকা ধরে ধরে প্রতিটি বুথের দিকে নজর রেখেছিলেন। এবার এই ওয়েব কাস্টিং এ আরও যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা হলো ভিডিও-র সাথে পরিষ্কার অডিও শুনতে পাওয়া। বুথের ভিতরের শুধু ছবি দেখতে পাওয়াই নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সেখানে কে কি বলছে না বলছে সব চলে আসছিলো সিইও দফতরে। এইসব বিভিন্ন কারণেই এই সাফল্য বলে মনে করছে কমিশন।
আরও পড়ুন : গাছ বাঁচাতে গাড়ি থেকে নামলেন মন্ত্রী স্বয়ং