Date : 2024-05-20

সন্দেশখালির ভিডিও কান্ডে বিরক্ত ভোটাররা, উদ্বিগ্ন মহিলারা

সত্যজিৎ চক্রবর্তীঃ গত শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের স্টিং ভিডিয়ো এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্যাতিতাদের সাক্ষাৎ ইস্যুতে রেখাদের আরেকটি ভাইরাল ভিডিও তৃণমূলকে স্বস্তি দিলেও ক্ষিপ্ত হয়েছেন বসিরহাটের একাংশ ভোটাররা । তবে ভিডিও দুটির সত্যতা যাচাই করেনি আর প্লাস নিউজ।

বারাসতে রেখা যখন মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন সেসময় খবর আসে স্টিং ভিডিয়োকাণ্ডে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল এবং বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি । রেখাদের মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া মিছিলে বারাসতে এসে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সন্দেশখালীর একের পর এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় শুভেন্দু বলেন,” ‘ভাইপো (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়)-কে জিজ্ঞাসা করুন। এটা ভাইপো আর আইপ্যাক এর কাজ। রেখা পাত্রের মত একজন দলিত পরিবারের মেয়েকে পিসি আর ভাইপো এত ভয় পাচ্ছে- এটাই আমাদের কাছে গর্বের। ১৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর, ২ হাজার কোটি টাকা ইলেক্টোরাল বন্ডে জমা করার পর, পাঁচ টিকা বাড়ি করার পর, চারটে চার্টার্ড ফ্লাইট কেনার পরেও একজন গরিব বাড়ির মেয়েকে ভয় পাচ্ছে। এবার গরীবের সাথে চোরদের লড়াই।আমাদের প্রার্থী প্রার্থী রেখা পাত্রই জিতবে।”

বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দিলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। এদিন সকালে বারাসতে আসেন রেখা। হৃদয়পুরের রথতলা মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিজেপির মিছিলে হুড খোলা গাড়িতে উঠে জেলা শাসকের কার্যালয়ে আসেন। এসময় রাস্তার পাশের দোকান এবং যাতায়াতকারীদের দিকে হাত নাড়েন রেখা। সন্দেশখালির প্রতিবাদী নির্যাতিতাকে দেখতে রাস্তার পাশে দোকান ছেড়ে আসেন বহু ব্যবসায়ী। তারাও রেখার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। কেউ কেউ দু হাত জোড় করে নমস্কার দেন। মনোনয়ন জমা দিতে বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার সময় রেখা পাত্রকে ঘিরে ধরে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা। রেখাকে আগলে রাখে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। রেখা উত্তর দিতে চাননি। নাছোড় সাংবাদিকদের থেকে রেখাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে গেলে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীদের কার্যত ধাক্কাধাক্কি হয়। এরই মধ্যে রেখা বলেন, ” যা হয়েছে আগে হয়েছে। ওটা নিয়ে কিছু বলব না। ” যাওয়ার পথে ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে রেখাকে সাংবাদিকেরা ফের প্রশ্ন করলেও জবাব দিতে চাননি।
সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিকে
বিজেপি অবশ্য ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিকৃত’ বলে দাবি করেছে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছে তারা। ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার দাবি নিয়ে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধরও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি, এই ভিডিয়োর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা। রেখাও সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিডিয়োটিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছেন।

স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে বুধবার আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিয়োটিরও সত্যতা আর প্লাস যাচাই করেনি। ভিডিয়োয় এক মহিলা দাবি করেছেন, তাঁকে দিয়েও ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করানো হয়েছিল। তাঁকে কিছু না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তাঁকে দিয়ে মিথ্যে মামলা করানোর নেপথ্যে ছিলেন বিজেপির এক স্থানীয় নেত্রী পিয়ালি ওরফে মাম্পি দাস। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের হয় পরে। সেটি এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করা হয়। সেই মাম্পিকে সমনও করা হয়েছে পুলিশের তরফে। বারাসতে মাম্পি বলেন, ” তৃণমূল এখন নোংরা রাজনীতি করছে। “

স্টিং ভিডিও এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আসা ভিডিও তৃণমূলকে স্বস্তি দিলেও বসিরহাটের একাংশের ভোটাররা ক্ষুব্ধ। এমনকি জেলার সদর শহর বারাসতেও তার আঁচ এসেছে। এদিন রেখাকে বারাসতে দেখে পথে যাতায়াতের অনেকেই দাঁড়িয়ে বলেন, “জিতে জবাব দিও মা। “রবিন মণ্ডল বলেন, “সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে ভোট পণ্যের মত আচরণ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। “অনেকেই সিপিএমের নিরাপদ সরদারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।বসিরহাটের বাসিন্দা জগদীশ চক্রবর্তী বলেন, “মহিলাদের রাজনীতির অস্ত্র বানিয়ে ভোট বাজারে ফায়দা নিতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলো।নিরাপদ এতদিন সুর চড়িয়েছিল, এখন মিনমিন করছে। মহিলা নির্যাতন নিয়ে ভোটের রাজনীতি আগে কখনও বসিরহাটে হয়নি। তৃণমূল এটা ঠিক করছেনা।বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম দুদিন আগে বারাসতে মনোনয়ন জমা দিতে এসে স্টিং ভিডিও নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বসিরহাটের তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দলের কিছু অংশ উচ্চ নেতৃত্বকে ভুল পথে চালিত করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “স্থানীয় ভোটারদের সামলাতে হয় আমাদের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। “

“বসিরহাটের বাসিন্দাদের দাবি, সন্দেশখালিতে শাহজাহানদের অত্যাচার সম্পর্কে সবাই জানে। তৃণমূল নিজেদের কৃত কর্ম আড়াল করতে মহিলাদের নিয়ে খেলছে।তাদের দাবি তৃণমূল যে ভিডিওকে হাতিয়ার করছে সেখানে মহিলাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তা ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে । বসিরহাটের বাসিন্দা নৃপেন সাহা বলেন, ” আমার কাছে সব ভিডিও আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মহিলাটি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি কিছু বলছেন তার ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে। এসব করে লাভ কি? তৃণমূল তো এমনিই জিতবে। এসব করে বরং হারার চেষ্টা করছে। “

সন্দেশখালির মহিলাদের দাবি এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে খুশি নয় মহিলা মহল। বসিরহাটের গৃহবধূরা যথেষ্ট বিরক্ত। গৃহবধূ তানিয়া মণ্ডল বলেন, ” যা হচ্ছে তাতে তো মহিলারা অপমানিত হচ্ছেন। সন্দেশখালির মহিলাদের ভাব মূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ভোট শেষ হলে সেখানকার মেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যা হলে রাজনৈতিক নেতারা কি তাদের ছেলের বৌ করবেন? ভোটের জন্য এই দরদ আসলে মহিলাদের সম্ভ্রমে আঘাতের সামিল। “

ভোট রাজনীতিতে সন্দেশখালির স্টিং ভিডিও এবং মহিলাদের বক্তব্যের ভিডিও রাজ্য কেন্দ্রের দুই শাসক দলের একজন জিতবেন ঠিকই কিন্তু তাতে সন্দেশখালির মহিলাদের কি হবে? নোনা জলের রাজনৈতিক কুমির শাহজাহান বাংলার মহিলা মহলের এই ক্ষতি পূরণ করতে পারবে কি? জলাঞ্জলি হবে না তো শাহজাহানের দল তৃণমূলের লক্ষীর ভান্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধির এক হাজার টাকা?

আরও পড়ুন : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছে বিএসএফ