‘তারকা প্রচারক‘। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে দুই অক্ষরের এই শব্দবন্ধ রাজ্য রাজনীতিতে বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কিন্তু কি এই তারকা প্রচারক ? কারা হন তারকা প্রচারক ? তারকা প্রচারক হওয়ার সুবিধা কি ? তারকা প্রচারকের নামের তালিকা কেন নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ?
সঞ্জু সুর, সাংবাদিক ঃ নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনতে ও প্রার্থী পিছু খরচে রাশ টানতে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো এক্সপেন্ডিচার অবজারভার নিয়োগ। অর্থাৎ একজন প্রার্থী নির্বাচনের সময় যথেচ্ছ অর্থ ব্যয় করছে কি না, বা অর্থের বিনিময়ে ভোট কিনছেন কি না, অথবা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে খরচের নিরিখে যাতে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে, সেটা নিশ্চিত করা। কিন্তু কেন এই নিশ্চয়তার প্রয়োজন পড়লো ?
একটা সময় আমাদের দেশে নির্বাচন মানেই ছিলো যার কাছে বেশি টাকা আছে সেই জয়লাভ করবে। অনেক সময় অভিযোগ আসতো কোনও একজন প্রার্থী শুধু টাকা ছড়িয়েই ভোটারদের কিনে নিয়েছে। ভোটের আগে ভোটারদেরকে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে নিজের পক্ষে ভোট করানো যেন জলভাত ছিলো সেই সময়। ফলে অনেক সময় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন এমন প্রার্থী ভোটের আগেই পিছিয়ে পড়তেন আর্থিকভাবে বলবান প্রার্থীর কাছ থেকে। অনেকেই এটাকে ‘ডোলের ভোট’ বলে থাকে। নির্বাচনে এই যথেচ্ছ অর্থের ব্যবহারে রাশ টানতে প্রার্থী পিছু খরচের সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
বর্তমানে লোকসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী তাঁর প্রচারের জন্য খরচ করতে পারেন ৯৫ লক্ষ টাকা। বিধানসভা নির্বাচনে এই সীমা হলো প্রার্থী পিছু ৪০ লক্ষ টাকা। একজন প্রার্থী তাঁর ভোটের প্রচারে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে, সভা সমিতি করা, মঞ্চ বাঁধা, রোড শো করা, গাড়ি ভাড়া করা, বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দেওয়া, ইত্যাদি খাতে খরচ করতে পারেন। ভোট মিটে যাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ অডিট রিপোর্ট কমিশনকে জমা দিতে হয়। এ তো গেলো খরচের হিসাব। কিন্তু তার সঙ্গে তারকা প্রচারকের যোগসূত্র কি ? এখানেই কমিশন প্রার্থীদের জন্য একটা আলাদা সুবিধার ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারের জন্য যে টাকা খরচ করবেন, সেই হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হবে যদি তাঁর এলাকায় তাঁর দলের তারকা প্রচারক প্রচার করতে আসেন। তারকা প্রচারকের জন্য যে টাকা খরচ হবে সেটা সেই রাজনৈতিক দলের খরচের হিসাবের মধ্যে ধরা হবে। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অবশ্য খরচের কোনো সীমা রাখেনি কমিশন। ফলে প্রতিটা প্রার্থীই তাঁর দলের তারকা প্রচারকদের দিয়ে বেশি সভা সমিতি বা মিছিল করাতে চায়। এবার বিষয়টা হচ্ছে তারকা প্রচারক এর মান কাকে কাকে দেওয়া হবে। এটা অবশ্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর উপরেই ছেড়ে রেখেছে। তাই ভোটের প্রচার পর্ব শুরু হওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের কাছে তারকা প্রচারকের নামের তালিকা জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন – Kunal Ghosh : কান্নায় ভেঙে পড়লেন কুনাল ঘোষ