বেআইনি হকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের পর গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে পুলিশ। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পুর এলাকায় গত দিন দুই ধরে একাধারে হকার উচ্ছেদে নেমেছেন পুলিশ ও পুর আধিকারিকরা। এই আবহেই বৃহস্পতিবার পুর প্রতিনিধিদের নিয়ে ফের একটি জরুরি বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এর পর এই সপ্তাহের শুরুতে সোমবার, পুরসভা নিয়ে দুটি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে বেআইনিভাবে বসে পড়া হকারদের বিষয়ে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর তোপের মুখে পড়েন সুজিত বোস, ফিরহাদ হাকিম এর মতো মন্ত্রী সহ পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকরা। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরপরই গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন জায়গায় হকার উচ্ছেদ অভিযানে নামে পুলিশ। বেআইনি হকার উচ্ছেদের নামে অনেক জায়গায় পুলিশ গাজোয়ারি করছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এমন সময় বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে জরুরি বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের পর পুলিশ যেভাবে হকার উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে তাতে হিতে বিপরীত অবস্থান দেখছে সরকার। বিভিন্ন হকার সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগ জমা পড়েছে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও। অভিযোগের মূল হলো বেআইনি হকার উচ্ছেদের নামে এমন হকারদেরও তুলে দেওয়া হচ্ছে যারা গত প্রায় তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। কাদের উচ্ছেদ করা হবে বা কারা সেই অর্থে বেআইনিভাবে বসেছে, এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটা নির্দিষ্ট সময়কালের কথা জানিয়েছিলেন। সোমবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন কোভিড পরবর্তী সময়ে যারা নতুন করে রাস্তা বা ফুটপাত আটকে বসেছে, তাদের তুলে দিতে। আর কোভিডের আগে থেকে যারা ব্যবসা করছেন, সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হোক। হকার সংগঠনগুলির অভিযোগ সেটা মানা হচ্ছে না। পুলিশ একধারসে সবাইকেই উচ্ছেদ করছে। যে বুলডোজার ব্যবহার নিয়ে রাজ্যের শাসকদল এতদিন বিজেপিকে, বিশেষ করে যোগীর নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকারকে আক্রমণ করে এসেছে, এখন সেই বুলডোজার ব্যবহার করছে কলকাতা পুলিশ। নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশের এই বাড়াবাড়ি আবার না বুমেরাং হয়ে যায়। ফলে প্রমাদ গুনছে সরকার। নবান্নের এক আমলার কথায় মুখ্যমন্ত্রী কখনই সব হকার কে উচ্ছেদ করতে বলেন নি, বরং সেদিনের বৈঠকটি যদি ভালোভাবে ফলো করেন তাহলে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী এটাও বলেছিলেন যে হকাররা আমার ভাই। তাহলে হঠাৎ করে এইভাবে নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ নামলো কেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে ওই আধিকারিক জানান, সম্ভবতঃ এই কারণেই বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হকার সংক্রান্ত কোনো পলিসির কথাও মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানাতে পারেন বলেই জানালেন তিনি। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব সহ সব পৌর নিগমের মেয়র, সব পুরসভার (ঝালদা ও তাহেরপুর বাদ দিয়ে) চেয়ারম্যান, সব জেলাশাসক, সব কমিশনারেটের সিপি ও সব জেলার পুলিশ সুপার ও গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি ও আইসিকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন : বিধানসভায় বিক্ষোভ অবস্থানে দুই বিধায়ক। কিন্তু কেন ?