ভোট মিটতেই রাজ্যের কৃষকদের তিন হাজার কোটি টাকা দিলো রাজ্য সরকার। এই টাকার মধ্যে একদিকে যেমন ‘কৃষক বন্ধু (নতুন)’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা রয়েছে, পাশাপাশি ‘বাংলা শস্য বিমা’ যোজনার টাকাও রয়েছে।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ভোটে জিতে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী প্রথম যে ফাইলে সই করেছিলেন সেটি ছিলো ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষক সন্মানিধি যোজনা’-র ফাইল। এর মাধ্যমে কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের ঠিক তিনদিনের মাথায় রাজ্য সরকারও কৃষকদের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করলো। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে এই বিষয়ে নিজের মত জানিয়েছেন।
একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের টাকা পাঠানো হয়েছে তেমনি টাকা পাঠানো হয়েছে রাজ্যের কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষক ও বর্গাদারদের ও। পোষ্টে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “চলতি রবি মরসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যে সকল কৃষকের চাষের ক্ষতি হয়েছিল তাঁদের এই সহায়তা করা হচ্ছে। আমাদের সরকার ‘বাংলা শস্য বিমা’ চালু করার ফলে ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও আমাদের কৃষকরা এভাবেই আর্থিক ক্ষতির থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। এজন্য তাদের কোনো টাকাও দিতে হচ্ছে না। শস্যবীমার প্রিমিয়ামের পুরো টাকাও রাজ্য সরকারই দিচ্ছে।” এদিন এরাজ্যের প্রায় ২.১০ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি মোট ২৯৩ কোটি টাকা দেওয়া হলো। মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, “২০১৯ সালে চালু হবার পর থেকে ‘বাংলা শস্য বিমা’ প্রকল্পে ১ কোটি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে মোট ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের বিপদে কৃষকদের পাশে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। জয় বাংলা!”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এই টাকা দেওয়ার পাশাপাশি ‘কৃষক বন্ধু (নতুন)’ প্রকল্পের টাকাও আজকে রাজ্যের কোষাগার থেকে ছাড়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “কৃষক বন্ধু (নতুন) প্রকল্পে যেসব কৃষক ও বর্গাদাররা নথিভুক্ত তাদের অ্যাকাউন্টেও আজকে ২,৯০০ কোটি টাকা দেওয়া হলো। এতে রাজ্যের প্রায় ১.০৫ কোটি কৃষক উপকৃত হবেন। প্রসঙ্গত আমাদের রাজ্যের কৃষকদের জন্য বছরে দুইবার (খারিফ মরসুম ও রবি মরসুম) আর্থিক সহায়তা প্রদান করে রাজ্য। এক্ষেত্রে এক একর বা তার বেশি জমি থাকা কৃষকদের ৫ হাজার টাকা করে দুই বারে মোট ১০ হাজার ও তার নিচে জমি থাকা কৃষকদের ক্ষেত্রে জমির পরিমাপ অনুযায়ী সবচেয়ে কম ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়। লোকসভা নির্বাচনের কারণে এই প্রথম কিস্তির টাকা এতদিন দেওয়া যাচ্ছিলো না। ভোট মিটতেই তাই মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের জন্য এই টাকা বরাদ্দ করলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত এই খাতে ১৮,২৩৪ কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এরাজ্যে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনো কৃষকের মৃত্যু হলে সরকার এককালীন দুই লক্ষ টাকা তাঁর নিকটাত্মীয়দের দিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সেই খাতে এখনো পর্যন্ত এরাজ্যের মোট ১,১২,০০০ এমন পরিবারকে (মৃত কৃষকের পরিবার) মোট ২,২৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পোষ্টের একদম শেষে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমরা আমাদের কৃষকদের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। জয় কিষান।”
আরও পড়ুন : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তদন্তে গাফিলতি নিয়ে হাইকোর্টের রোষের মুখে ইডি