সরকারি জমি জবরদখল করে বহাল তবিয়তে আছেন ? সরকারের রাস্তা বা ফুটপাতে বেআইনিভাবে দোকান করেছেন ? সেসবের দিন শেষ। আইনের বাইরে থাকা সব কিছু থেকেই এবার জবরদখল হটাতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- লোকসভা নির্বাচনে সমস্ত প্রতিকুলতাকে জয় করে রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুর্ণীতি ইস্যু থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা, সব অভিযোগ সরিয়ে রাজ্যের মানুষের সমর্থন যে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই রয়েছে ভোটের ফলে তা প্রমাণিত। তবে রাজ্যের শাসকদলের কাছে কাঁটার খোঁচার মতো বিঁধছে শহরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত খারাপ ফল। রাজ্যের অধিকাংশ শহর কেন্দ্রিক এলাকায় ভোট কমেছে তৃণমূলের। এর পিছনে পুরসভা গুলোর কাজের ভূমিকাকেই মূলতঃ দোষী বলে মনে করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শাসক দল ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেছেন পুরসভা গুলো পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে আর তার ফল ভুগতে হয়েছে ভোটে।
বৃহস্পতিবারই পুর নিগমের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরিষ্কার অভিযোগ ছিলো পুরসভা গুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে অনেক পুরপ্রতিনিধিই পরিষেবা প্রদান এর বদলে টাকা রোজগারকেই প্রধান কাজ ধরে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আরেকটি বড় অভিযোগ ছিল সরকারি জমি জবরদখল করা নিয়ে। শহর কলকাতা হোক বা বিধাননগর এলাকা। সরকারি জমি হোক বা রাস্তা অথবা ফুটপাত। সবকিছুই জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকেই সবার সামনেই বলেন, এই ধরনের জবরদখলে একদিকে যেমন কিছু পুরপ্রতিনিধির হাত রয়েছে, তেমনি যোগসাজশ রয়েছে সরকারি অফিসারদেরও। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এসব বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ হঠাৎ করে যে কেউ রাস্তা বা ফুটপাত আটকে দোকান করে বসবে, বা সরকারি জমি দখল করে ক্লাব, পার্টি অফিস তৈরি করবে, এসব আর চলবে না। এইসব জবরদখল হটাতে হবে। বিষয়টি দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করে দেন। অর্থ দফতরের সচিব মনোজ পন্থ, সেচ সচিব প্রভাত মিশ্র, এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সহ মোট পাঁচ জনকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন জবরদখল হটাতে পলিসি তৈরি করতে। আমলা মহল মনে করছে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করার মাধ্যমেই মুখ্যমন্ত্রী এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এই বিষয়ে (জবরদখল) তিনি কতটা ক্ষুব্ধ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এই কমিটি একদিকে যেমন পলিসি তৈরি করবে তেমনি তাঁরা এটাও খুঁজে বের করবেন কারা কারা এইসবে যুক্ত। এদিকে নবান্নের এক আমলা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী কারও পেটে লাথি মারার পক্ষপাতি নন, তবে হঠাৎ হঠাৎ করে রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে দোকান, পার্টি অফিস বানানোটাও তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি জানিয়েছেন যারা অনেক আগে থেকে সরকার বা পুরসভার কাছ থেকে আইনানুগ অনুমতি নিয়ে অস্থায়ী ভাবে দোকান করছেন তাদের বিষয় সহানুভূতির সঙ্গেই দেখা হবে, কিন্তু সরকারি এলাকায় কোনো দলীয় অফিস কোনোভাবেই রাখা যাবে না। পুর নিগমের বৈঠকে এই বার্তা দিলেও আগামি সোমবার পুরসভা নিয়ে যে বৈঠক আছে সেখানেও এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরব হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : ন্যায় সংহিতা আইন আপাতত কার্যকর না করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর