এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল এমন পাঁচ জনকে প্রার্থী করেছিলো যারা এই মাস কয়েক আগেও অন্য দলের নেতা, সাংসদ বা বিধায়ক ছিলেন। ভোট ঘোষণার আগে বা অব্যবহিত পরে তাঁরা দল বদলে অন্য দলে যোগ দেন ও নির্বাচনে প্রার্থী হন। মঙ্গলবার ভোটের ফল ঘোষণার দিন দেখা যাচ্ছে তাঁরা সকলেই নিজের নিজের কেন্দ্রে হেরেছেন বা অনেক ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- নীতিহীন দল বদল রাজ্যের মানুষ সম্ভবতঃ ঠিক পছন্দ করছে না। তাই তিনি রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থী হোন বা কেন্দ্রের, তাঁকে হারিয়ে একটা শিক্ষা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিলো রাজ্যের জন-গণদেবতা।
রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জেতা মুকুট মনি অধিকারী। তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েই একেবারে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফল বের হওয়ার দিন দেখা গেল রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বিজেপির বিদায়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকারের থেকে ৮৮,৭১৬ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। আবার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস ও বিজেপির টিকিটে বিধানসভায় জেতার পর পুরানো দল তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন। মুকুট মনির মতো তিনিও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লোকসভায় জোড়া ফুলের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই বিশ্বজিৎ দাস এদিন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ৬৪,২০০ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন বিজেপির বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের থেকে। রায়গঞ্জ কেন্দ্রের কৃষ্ণ কল্যানী বছর খানেক আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যান।
ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর বিধানসভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেই কৃষ্ণ কল্যানীও রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কার্তিক চন্দ্র পালের থেকে ৪৩,৩২৩ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। এই ব্যবধান কমানো আর সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
এ তো গেলো বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা দলবদলু-দের কথা। উল্টোদিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি দুই সাবেক তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়ক। তারমধ্যে ব্যারাকপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং ২০১৯ এর মতো ২০২৪ এও ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে টিকিট পেয়েছিলেন। তবে ২০১৯ এ তিনি জিততে পারলেও এবার জোড়া ফুলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের কাছে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ভোটে হার মানতে হলো। এদিন হেরে যাওয়ার পর তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, কি কারণে তাঁর এই পরাজয় সেটা এখনও খতিয়ে দেখার সুযোগ পান নি। তবে এদিন গণনা কেন্দ্রের সামনে তাঁকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা ‘পল্টুরাম’ বলে কটাক্ষ শানিয়েছে। সবশেষ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার পোড় খাওয়া নেতা ও বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক তাপস রায়। তাঁকেই উত্তর কলকাতায় প্রার্থী করেছিলো পদ্ম শিবির। সেই তাপস রায় ও তাঁর ঘোর শত্রু তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে প্রায় হারতে চলেছেন। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে তাপস রায় ৪৬,৫২০ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে। এক্ষেত্রেও পদ্ম প্রার্থী যে হারতে চলেছেন তা এক প্রকার নিশ্চিত। ফলে এক কথায় বলা যায় রাজ্যের পাঁচ আসনের পাঁচ দলবদলু প্রার্থীকে রাজ্যের জনগন বর্জন করে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা বার্তা দিলো।
আরও পড়ুন : অমিত শাহকে তাড়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জিতবে কে !