নাজিয়া রহমান, সাংবাদিকঃ ‘আড্ডা’ এই শব্দটির সঙ্গে বাঙালির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। আর বই নিয়ে আড্ডা দিতে, তর্কবিতর্কে যেতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। তবে এই জায়গা অনেকটা দখল করে নিচ্ছে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ । বিশেষ করে মোবাইল মানুষের হাতের মুঠোয় বিশ্বকে এনে দিয়ে অন্যতম পরম বন্ধু হয়ে উঠেছে। তেমনই মোবাইলকে সঙ্গী করে মানুষ ভুলতে বসেছে সামাজিকতা থেকে আড্ডা সবকিছুই। অর্থাৎ বর্তমানে মোবাইলের সুফলের থেকে কুফল মানুষকে বেশি করে গ্রাস করে নিচ্ছে। এমনইকি ই-বুক এসে যাওয়াতে পাতা উল্টে বই পড়ার প্রবণতাও হারিয়ে গেছে। এই মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষ যাতে আবার বইমুখি হয় তার এক ছোট্ট প্রয়াস দক্ষিণ কলকাতার এক বুক সপে। দোকানটির নাম ইংরেজি হলেও বাঙ্গালিআনায় ভরপুর। রবীন্দ্রনাথ থেকে সত্যজিৎ রায়। ফেলুদা থেকে বোমকেশ। উত্তমকুমার থেকে সৌমিত্র। কেউ বই আকারে, কেউ বা কোস্টারে আবার কেউ কাটাউটে বা বুকমার্কে। অর্থাৎ সবাই একছাদের তলায় বিভিন্ন জিনিসপত্রের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। বাঙালীয়ানা, আড্ডা আর বই। এই তিনের মিলিত রূপ দোকানটি। দোকানটিতে বসে আড্ডা দিতে দিতে বই পড়তে গেলে পাঠকদের একটি শর্ত সবার আগে মানতে হবে। “বই নিয়ে যতক্ষণ খুশি বসুন, আড্ডা দিন গল্প করুণ কিন্তু ল্যাপটপ নিয়ে নয়। “
দোকানটিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল মোবাইল বুক বা পকেট ফ্রেন্ডলি বই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ। বর্তমানের বই বিমুখ বাঙালিদের নিয়ে বহুকাল আগে রঙ্গ-রসিকতা করে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা আলী লেখেন “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না ৷” আবার বইপড়া নিয়ে কবীর হুমায়ুনের কথায়, “ভ্রমণেতে বাসে ট্রেনে দুপুরের আলস্যে, জীবনের প্রয়োজনে বই পড়ো শুয়ে-বসে ।” লেখক হুমায়ুনের সেই লেখাই সত্য করেছেন এক বাঙালি। পাঠকের সামনে চটজলদি পকেট বইয়ের সিরিজ এনে। ৩/৬ ইঞ্চি মোবাইলের সাইজের বই। পাঠক যাতে মোবাইল ভেবে বইটাকে পড়ে ফেলে তারজন্যই এই ভাবনা।
স্মার্ট ফোনের বোতাম টিপলে বিশ্ব আসে হাতে মুঠোয়। কিন্তু পাতা উল্টে বই পড়ার মধ্যে যে আনন্দ থাকে অন্য কোনও কিছুতের তার স্বাদ মেলেনা। তাই স্মার্টফোনের মাপের ছোট এই বইগুলি পকেটে পুরেই বহন করা যায়। নতুন প্রজন্মের মধ্যে যাতে পাতা উল্টে বই পড়ার অভ্যাস আরও বেশি করে গড়ে ওঠে তাই এই উদ্যোগ।
আরও পড়ুন : একসময় স্নান করিয়েছিলেন মেসি – আজ ইউরোয় ইতিহাস লিখছেন ইয়ামাল