তিনি কি বিজেপির বিধায়ক ? না কি তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ? তিনি আসলে কোন দলের ? অধ্যক্ষের মতে তিনি বিধানসভার খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক। আবার বিজেপি পরিষদীয় দলের মতে তিনি অনেকদিন আগেই তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন, তাই তিনি তৃণমূলের। সেই তিনি অবশ্য বললেন, তিনি সাধারণ মানুষের। তিনি আলিপুরদুয়ার এর বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠন নিয়ে শুক্রবার বিধানসভায় প্রস্তাব আনে রাজ্যের শাসক দল। শুক্রবার এক দফা আলোচনার পর সোমবার বিধানসভার দ্বিতীয় অর্ধে ছিলো শেষ দফার আলোচনা। এদিন আলোচনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন আজ এই প্রস্তাবের আলোচনায় যে বক্তার তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে সুমন কাঞ্জিলাল বলে একজনের নাম রয়েছে। এই সুমন কাঞ্জিলাল কে ? তাঁকে তো আমরা চিনি না। কেন তাকে বিজেপির সময় থেকে সময় বরাদ্দ করা হয়েছে ? প্রশ্ন তোলেন বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ। তখন অধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, সুমন কাঞ্জিলাল আলিপুরদুয়ার এর বিধায়ক আমার কাছে এসেছিলেন এই বিষয় নিয়ে তিনি বলতে চান বলে জানিয়েছিলেন। বিধানসভার খাতায় তিনি বিজেপির বিধায়ক হিসাবেই লিপিবদ্ধ। এরপরেই বিজেপির পক্ষ থেকে অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই শ্লোগান, সাউটিং শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। কিছুক্ষণ পরে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যান তাঁরা।
এই বিষয় নিয়ে শঙ্কর ঘোষ বলেন, “যিনি অভিষেকের কাছ থেকে তৃণমূলের পতাকা গ্রহণ করেছেন, যাকে তৃণমূলের মঞ্চে দেখা যায়, সেই সুমন বাবুর এখানে (বক্তা তালিকায়) বিজেপির হয়ে নাম দেখা যাচ্ছে।” শংকর ঘোষ আরো অভিযোগ করেন, “বিজেপির পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে তাঁর (সুমন কাঞ্জিলাল) নাম দেওয়া হয়নি, তাহলে এই নাম কেন দেওয়া হল (তালিকায়)! অসংসদীয় ভাবে অধ্যক্ষ সাহেব চালাচ্ছেন। এর সঙ্গে আমরা সহমত নই। তাই আমরা ওয়াক আউট করেছি।”
এদিকে বিজেপি অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই সুমন কাঞ্জিলাল কে আজকের প্রস্তাব নিয়ে বলতে বলেন। প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে আলিপুরদুয়ার এর বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, “ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা জলে যে বিধ্বংসী বন্যার ফল ভোগ করছেন আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার মানসিকতা এই বিজেপি বিধায়কদের নেই। এরা শুধু সংকীর্ণ রাজনৈতিক মানসিকতা নিয়ে মিডিয়ার সামনে মুখ দেখাতে ব্যস্ত।” তিনি আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গের জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি তাদের (বিজেপির উত্তরবঙ্গের বিধায়কদের) সহমর্মিতা দেখানো উচিত ছিল। উল্টোদিকে তারা এই প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করছেন।” বিজেপির প্রতি সরাসরি আক্রমণ হেনে আলিপুরদুয়ার এর বিধায়ক বলেন, “আপনারা শুধু ভোটের রাজনীতি করছেন। জাতপাতের কথা বলে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করার কথা বলছেন। সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আপনাদের কোন কথা নেই।”
এদিকে সুমন কাঞ্জিলাল যখন বক্তব্য রাখছেন সেই সময় অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুমন কাঞ্জিলাল এর পুরো বক্তব্যই নিজের আসনে বসে শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর এই বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকবার আলিপুরদুয়ার এর এই বিধায়কের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “সুমন কাঞ্জিলাল যে কথা বলেছেন আমি তা সমর্থন করছি। উনি ওখানকার (উত্তরবঙ্গের) মানুষ। উনি আবেগ থেকেই একথা বলেছেন।” এরপরেও বেশ কয়েকবার সুমন কাঞ্জিলাল এর সুখ্যাতি শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে।
আরও পড়ুন : আপনাকেও চাই না! শুভেন্দুর সংখ্যালঘু’ মন্তব্য নিয়ে বিধানসভায় তোপ দাগলেন মমতা।