সত্যজিৎ চক্রবর্তী, আর প্লাস নিউজ : বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় কোটা সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেলেও আন্দোলন থেকে সরছে না আন্দোলনকারীরা। তারা গত কয়েকদিনের গণহত্যার বিচারের দাবি তুলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন। রায় ঘোষণার পর সংবাদ মাধ্যমকে আন্দোলনকারী জানিয়েছেন পুরো দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। ফলে আদালতের রায় ঘোষণার পরও আন্দোলনকারীরা ঢাকার রাজপথে আছেন।অন্যদিকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সেনা বাহিনীর মধ্যেও বিভাজন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর একাংশ মনে করেন, দেশের দ্বায়িত্ব তাদের নেওয়া উচিত। অপর অংশের দাবি, সমস্ত রাজনৈতিক দল বৈঠক করে সমাধান সূত্র বের করুক।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন সংস্থা সূত্রের খবর, রবিবার সকালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছে। একইসঙ্গে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫% মুক্তিযোদ্ধা ১ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের জন্য বহাল রাখার রায় দিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে সরকার চাইলে এই শতাংশ কমাতে ও বাড়াতে পারে। রায় অনুযায়ী ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। রবিবার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই রায় প্রদান করে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, রায় সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন রবিবারই জারি করতে হবে। এই রায় মানা বা না মানা নির্বাহী বিভাগের বিষয়। সরকার ইচ্ছা করলে কোটা বাড়াতে কমাতে পারবে বলে রায় বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ের পরও এদিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ,শনির আখড়া, রামপুরা ,বাড্ডা, উত্তরায় বিক্ষোভ চলছে। অভিযোগ, সেখানে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি করছে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ব্যাখ্যা, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বৈষম্য বিরোধী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি আংশিক মেনে নিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা কমানোর কথা বলা হলেও তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর বিষয় আদালতে কিছুই বলা হয়নি। এই দুই শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে প্রায় ৯০ শতাংশ কোটার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৫৬ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা ছাড়াও ৩০ শতাংশ নারী ও পাঁচ শতাংশ পোষ্য কোটায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা চাকরির সব শ্রেণীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা জানিয়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সবথেকে নিয়োগ করা হয়ে থাকে বেশি। তাই এই দুই শ্রেণিতেও সংস্কার করতে হবে। তাদের আরো দাবি, আন্দোলনে মৃতদের হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন ও অচলাবস্থা নিরসনের সেনাবাহিনী সরকার ও রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা যশোর কুমিল্লা সাভার ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস লগ এরিয়া কমান্ডারদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জানানো হয় দেশে চলমান পরিস্থিতি ও নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যার কারণে অধিকাংশ সেনা সদস্য ক্ষুব্ধ। লগ এরিয়া কমান্ডারদের এই বৈঠকে আরো বলা হয়েছে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। পুলিশের ভূমিকায় সেনা সদস্য সহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে খুব বাড়ছে পুলিশ নাগরিকদের হত্যা করছে এ অবস্থায় সেনা সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে চায় না । পুলিশের সঙ্গে কাজ করে সেনাবাহিনী নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিবের মাধ্যমে বৈঠকের সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে বইটাকে উপস্থিত এক সামরিক আধিকারিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম দ্য মিরর এশিয়াকে জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটিকে পদাধিকারী এক আধিকারিক বলেন, রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে সমঝোতার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে সরকারকে বলা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলে সামরিক বাহিনী যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে পারে ।এবং এই সিদ্ধান্ত বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে হবে। সূত্রের দাবি করে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছেন বর্তমানে সেনাপ্রধান ওয়াকার ও জামানসহ ৭-৮ জন ঊর্ধ্বতন সেনা আধিকারিক সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার আধিকারিকরা নিরপেক্ষ অবস্থানে আছেন। তবে কর্নেল পদমর্যাদা থেকে নিচের অফিসাররা সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই অংশটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় গ্রহণের দাবী জানিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্য ও সর্বাত্মক সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে দেশের সব গণতন্ত্রকে সমস্ত রাজনৈতিক দল সামাজিক সংগঠন এবং দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের সকল মানুষের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য রবিবার সকালে দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, কোটা আন্দোলন এখন জন-আন্দোলনের রূপ লাভ করেছে এটা এখন জাতীয় আন্দোলন আমাদের আর পিছু ফাটার কোনো সুযোগ নেই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে এটা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। তিনি আরো বলেন এখন আমাদের সব ধরনের মতভেদ ও বিভাজন ভুলে গিয়ে দেশ রক্ষার জন্য সবাইকে এক হতে হবে সর্বদলীয় ঐক্যের মধ্যে দেশকে অপশাসন থেকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি’র ওই নেতা আরো বলেন দেশে এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সরকার নির্বিচারে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে কোনভাবেই এই সরকারকে আর মেনে নেওয়া যায় না আমরা রাজপথে আছি সফল না হওয়া পর্যন্ত থাকবো। ওই নেতার কথায়, সারাদেশেই বিএনপি নেতাদের আটক করা হচ্ছে কিন্তু আটক দমন ও নিপীড়ন করে এই আন্দোলন বা দেশবাসীকে কমানো যাবে না। যেখানেই সরকারের পেটোয়া বাহিনী হামলা করবে সেখানেই দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য গত কয়েক দিনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ,সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজবিসহ একাধিক নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : ষড়যন্ত্রের শিকারে অশান্ত বাংলাদেশ ,কড়া নজর দিল্লীর