জেনেভা কনভেনশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইজরায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে বেরশেভা শহরে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে জানা যাচ্ছে হাসপাতালের পাশ থাকা একটি সামরিক গোয়েন্দা দফতরকে নিশানা করেছিল ইরান।খোনদাব শহরে ভারী জলের গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এই ভারী জল পরমাণু রিঅ্যাক্টরকে শীতল রাখতে ব্যবহার করা হয়।
মাম্পি রায়, সাংবাদিক- আঘাত পাল্টা প্রত্যাঘাত। ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ যেন থামার নাম নেই। ক্রমশ ভয়ংকর আকার ধারণ করছে দুপক্ষের যুদ্ধ। ইজরায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে বেরশেভা শহরে একটি হাসপাতালে হামলার অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে হামলার অভিযোগ উঠেছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে।
এদিকে পরোক্ষভাবে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এক সপ্তাহ ডেডলাইন দিলাম। এর মধ্যে ইসপার নয় উসপার হবে। হুমকির সুরে ইরানের প্রধান নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বার্তা দেন, “গুড লাক।” তাতেও ইরান ইজরায়েলের যুদ্ধের ঝাঁঝ এতটুকু কমেনি। বরং আরও বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী। জেনেভা কনভেনশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইজরায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে বেরশেভা শহরে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে জানা যাচ্ছে হাসপাতালের পাশ থাকা একটি সামরিক গোয়েন্দা দফতরকে নিশানা করেছিল ইরান। হাসপাতালের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাসপাতালটি ফাঁকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রোগীদের ওই হাসপাতালে আসতে বারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইরানের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রে ফের হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, খোনদাব শহরে ভারী জলের গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এই ভারী জল পরমাণু রিঅ্যাক্টরকে শীতল রাখতে ব্যবহার করা হয়। ইরান আরও দাবি করেছে, হামলার আগেই ওই কেন্দ্রটিকে ফাঁকা করে দেওয়ায় সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আশঙ্কা এড়ানো গিয়েছে। তবে এখনই থেমে যাবে না ইরান। ইরানের আরও জোরালো আক্রমণ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ। কাৎজ বলেন, ‘‘ইরানকে এর পরিণাম ভুগতে হবে।’’ ইজ়রায়েল এত সহজে মাথা নোয়াবে না, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ইরান সম্পূর্ণ অন্যায্য আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বঘেই। রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসির ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বাঘেই জানিয়েছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে বলে কোনও যথাযথ প্রমাণ নেই। রাফায়েল গ্রসিকে উদ্দেশ্য করে বঘেই বলেন, “বিভ্রান্তিকর কোনও বর্ণনার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এর জবাবদিহি আপনাকে করতেই হবে। আপনি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।“
১৩জুন, শুক্রবার ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইজারায়েল। মৃত্যু হয়েছে ইরানের সেনার চিফ অফ স্টাফ মহম্মদ বাঘেরির, রেভোলিউশনারি গার্ডসের কমান্ডার হোসেন সালামি, ইরানের এমার্জেন্সি কমান্ডের কমান্ডার এবং দুই শীর্ষ সেনা আধিকারিকের। এছাড়াও ইরালের ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকেও খতম করেছে ইজরায়েল। ইরান নিজেদের পরমাণু বোমা তৈরি করে নিলে ইজরায়েলের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে বলে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক সপ্তাহ কাটলেও এখনও চলছে দুপক্ষের যুদ্ধ। দুই দেশেই ৫০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ উর্দ্ধমুখী। কবে থামবে এই যুদ্ধ ? রাষ্ট্রনেতাদের সংঘাতে সাধারণ মানুষকে কেন বলি হতে হচ্ছে ? আবার কবে আগের মতো স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন? প্রশ্ন ইরান ও ইজরায়েলের সাধারণ মানুষের।