ভাটপাড়া পৌরসভার অন্তর্গত এলাকায় ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫টি পুকুর ভরাটের লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে, অথচ বাস্তবে ১০০-র বেশি পুকুর ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে—এমনই দাবি স্থানীয়দের।
সুব্রত বন্দোপাধ্যায়, সাংবাদিক ব্যারাকপুর- একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে, অন্যদিকে তাঁর দলের শাসিত ভাটপাড়া পৌরসভা এলাকায় এক বছরের মধ্যেই একের পর এক পুকুর ভরাটের ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, ভাটপাড়া পৌরসভার অন্তর্গত এলাকায় ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫টি পুকুর ভরাটের লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে, অথচ বাস্তবে ১০০-র বেশি পুকুর ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে—এমনই দাবি স্থানীয়দের।
এই ঘটনা নিয়ে ভাটপাড়া পৌরসভার ইও (EO), থানার পাশাপাশি বি.এল.আর.ও, এল.আর.ও সহ একাধিক দফতরে চিঠি পাঠালেও কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। ভাটপাড়া পৌরসভার উপ-পৌরপ্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন, “এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা অভিযোগ করছি ঠিকই, কিন্তু কিছুতেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে পারছি না।” তবে পৌরসভার একাংশ বিষয়টিকে অস্বীকার করছে। কাউন্সিলর শুকেশ বিশ্বাসের দাবি, “পুকুর নয়, এগুলো ওয়াটার বডি। পুকুর আর জলা জমির মধ্যে তফাৎ আছে।” তাঁর বক্তব্য, কতটা জল থাকলে সেটাকে ‘পুকুর’ বলা যায়, তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে।অন্যদিকে, পৌরসভার আরেক কাউন্সিলর সোমনাথ তালুকদার জানিয়েছেন, তিনিও থানায় অভিযোগ করেছেন, তবে কোনও সাড়া মেলেনি।
এই বিষয়ে যখন বি.এল.আর.ও-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তিনি জানান, “আমি নতুন এসেছি, এই বিষয়ে কিছু জানি না। তবে তদন্ত করে দেখব, প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, “ওয়াটার বডি মানেই পুকুর বা জলাশয়।” বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁর হুঁশিয়ারি, “আমরা ক্ষমতায় আসব। সমস্ত পুকুর খুঁড়ে দেব। যদি তার জায়গায় বাড়িও হয়, তাও ভেঙে দেব। না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।” অন্যদিকে সিপিআইএম-এর অভিযোগ, তারা বহুবার বি.এল.আর.ও-র দ্বারস্থ হয়েছেন, কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। তাঁদের বক্তব্য, “এই এলাকায় গত দেড় বছরে তিনজন বি.এল.আর.ও বদল হয়েছে, যেন ঘুঘুর বাসা।” প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক দলের দ্বিচারিতা ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ। এখন দেখার, প্রশাসন আদৌ এই ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে পারে কি না।