চিকিৎসকদের পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ফলের সঠিক সময় জেনে খাওয়া মেদ ঝরাতে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করতে পারে।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- আজকের ব্যস্ত জীবনে শরীর সুস্থ রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যেও অনেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চাইছেন। কিন্তু শুধুমাত্র ব্যায়াম নয়, ওজন কমাতে ডায়েটেও সচেতন হতে হবে। আর সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিজম। খাবার খাওয়ার পর শরীরে যে রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি ঘটে, তাকে বিপাকক্রিয়া বলা হয়। এই বিপাকের হার ঠিকঠাক না চললে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যায়, বাড়তে থাকে মেদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থাকে বলা হয় ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। আর এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে আপনার রোজকার ফল খাওয়ার অভ্যাসে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ফলের সঠিক সময় জেনে খাওয়া মেদ ঝরাতে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করতে পারে। নিচে রইল এমন কিছু ফলের তালিকা যা পেটের মেদ কমাতে বিশেষ কার্যকর:
১)আঙুর: মিষ্টি হলেও চিনির ভয় নেই!
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আঙুর একটি অত্যন্ত উপকারী ফল। এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আঙুরের রস খেলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস পায়। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে না। আঙুর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
*কখন খাবেন: সকালের জলখাবারের ২০ মিনিট আগে অথবা দুপুরের খাবারের আধ ঘণ্টা আগে।
২) আপেল: ফাইবারে ঠাসা, ক্ষুধা কমায়।
আপেল কম ক্যালোরিযুক্ত এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি মাপের আপেল থেকে মেলে প্রায় ১১৬ ক্যালোরি ও ৪.৪ গ্রাম ফাইবার। ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং খিদের বারংবার ফিরে আসা কমায়, ফলে ওজন কমানো সহজ হয়।
*কখন খাবেন: সকালের জলখাবারে বা শরীরচর্চার আগে।
৩) পেঁপে: হজমশক্তি বাড়িয়ে ওজন কমায়।
পেঁপেতে ফ্যাট থাকে না বললেই চলে। এতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজমে সাহায্য করে। নিয়মিত পেঁপে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, হজম ভাল হয় এবং মেদ কমে।
*কখন খাবেন: মিড মর্নিং স্ন্যাকস হিসেবে বা সন্ধ্যায় হালকা খিদে মেটাতে।
৪) তরমুজ: জলে ভরপুর, কিন্তু মেদ ঝরায় চটজলদি।
তরমুজে রয়েছে প্রচুর জল, ভিটামিন সি, এ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি ডিটক্স করতেও সাহায্য করে। ফলে চটজলদি ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।
*কখন খাবেন: দুপুরের খাবারের পরে অথবা বিকেলে। তবে খালি পেটে নয়।
৫)পেয়ারা: কম ক্যালোরি, বেশি উপকার।
পেয়ারা একটি আদর্শ স্ন্যাকস ফল। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার ও কম গ্লাইসেমিক রেট। একটি মাঝারি পেয়ারা থেকে মাত্র ৩৭ ক্যালোরি পাওয়া যায়। এটি কোলেস্টেরল ফ্রি, তাই মেদ কমানোর ডায়েটে নিঃসন্দেহে রাখা যায়।
*কখন খাবেন:
দুপুরের খাওয়ার পর, বিকেল ৩টা নাগাদ খেলে উপকার মিলবে।
খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে ও ফল খাওয়ার সময়জ্ঞান মেনে চললেই মেদ কমানো অনেক সহজ হয়ে ওঠে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শরীর আলাদা—তাই নিয়মিত ফল খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জলপান ও ঘুম অপরিহার্য। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে দেরি না করাই ভাল।
কোনও ফলই অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না।