একসময় বিরোধী নেত্রী হিসেবে ‘ম্যান-মেড’ বন্যা শব্দবন্ধটি ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের অতি পরিচিত অস্ত্র। সেই সময় তিনি অভিযোগ করতেন, শাসকদলের গাফিলতিতেই রাজ্য বন্যার কবলে পড়ে। সময়ের চাকা ঘুরেছে, এখন তিনিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর ফের সেই পুরনো শব্দই ফিরল তাঁর মুখে— এবার বিধানসভা চত্বরে, ফের বন্যাকে ‘মানবসৃষ্ট’ বলে চিহ্নিত করলেন তিনি। তবে এবার নিশানায় রাজ্য নয়, সরাসরি কেন্দ্র ও দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিবেদন-মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সোজাসাপ্টা অভিযোগ, “এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি পরিকল্পিত বন্যা— কেন্দ্রের তৈরি বন্যা।” তিনি বলেন, ডিভিসি প্রতি বছর রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই একধাক্কায় বিপুল জল ছেড়ে দেয়। ফলস্বরূপ জলের তলায় চলে যায় দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল— পুরুলিয়া থেকে আরামবাগ, তালডাংরা থেকে উদয়নারায়ণপুর। ডিভিসি’র বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বিস্ফোরক অভিযোগ, তাঁর কথায়, তেনুঘাট, মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ থেকে যে পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে, তার কোনও আগাম বার্তা বা সমন্বয় নেই। নিয়মিত ড্রেজিং না হওয়ার ফলে বাঁধগুলোর জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, “যদি যথাসময়ে ড্রেজিং হত, তিনটি বাঁধ মিলিয়ে অন্তত ৪ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখা যেত। আজ সেই অবহেলার খেসারত দিচ্ছে বাংলা।”
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ হেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসমে বন্যা হলেই কেন্দ্র তৎপর, অথচ বাংলায় দুর্যোগ এলেও বরাদ্দ তো দূরের কথা, সহানুভূতিও মেলে না— এ অভিযোগও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান” প্রকল্পে এখনও একাই লড়তে হচ্ছে রাজ্যকে, বলেও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
এর পাশাপাশি এদনি পুকুর ভরাট নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবেশ সংরক্ষণে রাজ্যের ভূমিকা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘জলধরো’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৪.৫ লক্ষ পুরনো পুকুর নতুন জীবন পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বার্তা— “বেআইনিভাবে পুকুর ভরাট করলে ছাড় নেই। পুকুর ধ্বংস মানে ভবিষ্যতের বাংলাকে ধ্বংস করা।” শেষে একটাই প্রশ্ন— মুখ্যমন্ত্রীর এই তীব্র ও স্পষ্ট বার্তার পর ডিভিসি বা কেন্দ্র কী জবাব দেয়? নাকি আবার ‘নীরব দর্শক’ হয়ে থাকে?