শান্তিনিকেতন বাঙালির কাছে বরাবরের প্রিয়। অবসর পেলে, ছোটখাটো ঘুরে আসা মানে অনেকেই শান্তিনিকেতনকে বেছে নেন। কোপাইয়ের ধারে সময় কাটাতে কাটাতে চায়ের কাপ হাতে তুলে নেন প্রায় সবাই। আর সেই গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে যদি সঙ্গী হয় এক ঝাঁক পাখিদের কলতান? কেমন হয় বলুন তো?
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরভূমঃ বসে আছেন কোপাইয়ের ধারে, প্রকৃতির সৌন্দর্য আস্বাদন করছেন, যোগ্য সঙ্গত করছে প্রিয় কিছু গান, আর এরকম এক সময়ে গরম এক কাপ চা না হলে চলে? এবার সেই চায়ে চুমুক দিতে দিতেই কানে ভেসে এল পাখিদের কিচিরিমিচির যা এই শহুরে কংক্রিটের জীবনে প্রায় উধাও হয়ে গেছে বললেই চলে, তাহলে পুরো বিষয়টা একেবারে ছবির মত সুন্দর হবে বলুন? এরকম এক মুহূর্ত উপভোগ করতে আপনাকে আসতেই হবে শান্তিনিকেতনে গোয়ালপাড়ার কোপাই নদীর পাড়ে গোপাল লোহার চায়ের দোকানে।
শান্তিনিকেতনের কোপাই নদীর গোপাল লোহার এই চায়ের দোকানে গেলে আপনি খুঁজে পাবেন এক অন্যরকম ভালোবাসার গল্প। আজকালকার দিনে মানুষ যেখানে মানুষের কথা ভাবতে ভুলে গেছে সেখানে গোপাল ভেবেছেন পাখিদের কথা। কোপাইয়ের পাড়ে নিজের ছোট্ট চায়ের দোকানের চারপাশের যে সমস্ত গাছগুলি আছে সেখানে তিনি তৈরি করেছেন প্রায় ২০০টি পাখির বাসা। নিজের হাতে সৃষ্টি কয়ার সেই বাসাগুলোকে রোজ নিজের হাতেই যত্ন নেই। শুধু যে পাখির বাসা বানিয়েছেন তাই নয়, গোপাল প্রতিদিন সকালে আর বিকেলে খাবারও দেন পাখিদের। তবে না এই গোতা কাজে না নিয়েছেন কোনো সংস্থার সাহায্য আর না তো পেয়েছেন কোনো অনুদান। কোন কিছুর অপেক্ষা না করে সবটাই করেছেন নিজের সামান্য উপার্জনের মধ্য থেকেই।
এখন গোপালের দোকান রোজ ভরে থাকে পাখিদের কলতানে, যে সমস্ত পর্যটক আসেন তার দোকানে তারা অবাক হন তার এই কাজ দেখে। স্থানীয়রাও গর্ব অনুভব করেন গোপালের এই ভাবনায়। সকলেই বলেন, এখনও এভাবে কেউ ভাবতে পারেন? তারওপর গোপালের আয়ও তেমন কিছু নয় তবু তার মধ্যেও গোপাল স্বপ্ন দেখেন, নিজের সঙ্গে অন্যদেরও ভালো রাখারস্বপ্ন। গোয়ালপাড়ার পাখিদের কলতান, গাছেদের ছায়া, আর গোপালের চায়ের গন্ধ মিলে যেন তৈরি হয়েছে এক প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের নিদর্শন।