পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, বালির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল। ততদিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অপশন ঘুরে দেখা যেতেই পারে
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- ইন্দোনেশিয়ার বালি এখন আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। ভারত থেকেও বহু মানুষ গ্রীষ্মে কিংবা বর্ষায় বালি ঘুরতে যান। তবে চলতি সপ্তাহে সেখানে প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ ফের দেখা গেল। মঙ্গলবার সে দেশের লিয়োটোবি পর্বতের ‘লাকি লাকি’ আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে। ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, যার ফলে নির্গত ছাই মেঘের মতো ঘুরে ঘুরে প্রায় ১১ কিমি উচ্চতায় আকাশে স্তম্ভ তৈরি করেছে। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমগ্র ইন্দোনেশিয়া জুড়ে।
ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত থেকে বালির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একাধিক বিমান বাতিল করেছে এয়ার ইন্ডিয়াসহ একাধিক বিমান সংস্থা। কলকাতার একটি ট্যুর অপারেটর সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত বালির নগুরা রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সচল থাকলেও পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
এই অবস্থায় বালি সফর পরিকল্পনায় থাকা অনেক পর্যটক পড়েছেন দোটানায়। তবে আশার কথা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বালির মতো নয়নাভিরাম, অথচ তুলনামূলকভাবে সস্তা একাধিক গন্তব্য রয়েছে, যেখানে চটজলদি ছুটি কাটাতে যাওয়া যায়। সেই তালিকা থেকেই তুলে ধরা হল কিছু বিকল্প:
১) শ্রীলঙ্কা: বালির মতোই সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপদেশ-
ভারতের একদম দক্ষিণে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা এখন বালি ঘোরার আদর্শ বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে। বালির উবুদের মতো প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতার জন্য রয়েছে এলা। আর সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য রয়েছে ট্যাঙ্গালের মতো শান্ত সৈকত। এ ছাড়াও অহনগামা ও উলপোথার মতো জায়গা পর্যটকদের এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা দেবে, যা বালিকে সহজেই মনে করিয়ে দেবে।
*খরচ: ৬ থেকে ৭ দিনের সফরের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়তে পারে ৪৫,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকা।
২) ফুকেট এবং ক্রাবি, থাইল্যান্ড: সমুদ্র, পার্টি আর প্রকৃতির মোহ-
থাইল্যান্ডের ফুকেট ও ক্রাবি এখন ভারতীয় পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয়। কলকাতা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই পৌছনো যায়।
ফুকেটে রয়েছে প্যাটং সৈকত, পুরনো ফুকেট শহর, এবং নানান আইল্যান্ড ট্যুরের সুবিধা। অন্যদিকে ক্রাবিতে রাইলে বিচ, আও নাং শহর ও হং আইল্যান্ড আপনাকে বালির কথা মনে করিয়ে দেবে। পার্টি প্রেমীদের জন্য ফুকেট এবং পাটায়া যেন একেবারে স্বর্গরাজ্য।
*খরচ: ৬-৭ দিনের জন্য জনপ্রতি খরচ আনুমানিক ৪৫,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকা।
৩) লঙ্কাভি, মালয়েশিয়া: ৯৯টি দ্বীপের মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা-
মালয়েশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লঙ্কাভি আসলে ৯৯টি দ্বীপের সমাহার। প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসাবে রয়েছে, এখানকার বিখ্যাত লঙ্কাভি স্কাই ব্রিজ, যা বিশ্বের অন্যতম উঁচু সেতু। এছাড়া রয়েছে পানটাই সেনাং সৈকত, কিলিম জিওফরেস্ট পার্ক এবং নানা দ্বীপ ঘোরার সুযোগ। ওয়াটার স্পোর্টসপ্রেমীদের কাছেও লঙ্কাভি দারুণ অভিজ্ঞতা দেবে।
*খরচ: ৪-৫ দিনের সফরের জন্য জনপ্রতি খরচ ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা।
আপাতত বালির বদলে অন্য স্বর্গেও ছুটি কাটাতে পারেন! পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, বালির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল। ততদিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অপশন ঘুরে দেখা যেতেই পারে। নিরাপদ ভ্রমণই হোক সবার অগ্রাধিকার। ছুটি থাক, কিন্তু বিপদের ঝুঁকি নয়—সেই বোধ থেকেই বুদ্ধিমানের মতো গন্তব্য বেছে নেওয়া হোক।