ওয়েব ডেস্ক: দেশ জুড়ে চলছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। এ রাজ্যে সাত দফা নির্বাচনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা ইতিমধ্যে সমাপ্ত। ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফায় রাজ্যের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হতে চলেছে। চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণ হবে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে।
এই কেন্দ্রে এবার চর্তুমুখী লড়াই হতে চলেছে। নির্বাচনী প্রচারে কারও হাতিয়ার ৫ বছরে কাজের খতিয়ান, কারও প্রচারে আবার ঢালাও প্রতিশ্রুতি।
৫ বছরে কতটা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে এই অঞ্চলে? কোন কোন সুযোগ সুবিধা এখনও অধরা? নতুন সরকারের কাছে কী কী প্রত্যাশা বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের মানুষের? খবর নিতে আর প্লাস নিউজ পৌঁছে গেল গ্রাউন্ড জিরোয়। আজ নজরে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী
তৃণমূল কংগ্রেস- সুনীল কুমার মন্ডল
সিপিআইএম- ঈশ্বর চন্দ্র দাস
বিজেপি- পরেশ চন্দ্র দাস
কংগ্রেস- সিদ্ধার্থ মজুমদার।
২০১৭ সালে ৭ এপ্রিল মূল বর্ধমান জেলা ভাগ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান দুটি আলাদা জেলা হয়েছে।
মুঘল আমলে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার জমিদার ছিলেন চিত্র সেন রাই।
তিনি প্রথম মুঘল সম্রাট কর্তৃক রাজা উপাধিতে ভূষিত হন।
অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সদর শহর ছিল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
ঐতিহাসিকদের অনেকের মত জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীরের নাম অনুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়।
অনেকের মতে বর্ধমান নামটি আসে অঞ্চলের বর্ধিষ্ণুতার কারণে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় কার্জন গেট, ১০৮ শিব মন্দির, হাওয়া মহল, সর্বমঙ্গলা মন্দির উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান।
বর্ধমান জেলার নাম আসলেই শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মিহিদানা আর সীতাভোগ খাদ্য রসিকদের জিভে জল আনে।
বাংলার রসগোল্লার মতো বর্ধমানের মিহিদানা আর সীতাভোগ রীতিমতো লড়াই করে ছিনিয়ে নিয়েছে জিআই মার্ক।
রাজনৈতিক ইস্যুগুলির মধ্যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় সবচেয়ে বেশি ফলন হয় ধানের।
আগে অভাবের কারণে কৃষকরা অনেক সময়ই জলের দরে বিক্রি করে দিতেন ফসল।
রাজ্য সরকারের তরফে পূর্ব বর্ধমানে বেশ কিছু কৃষকমান্ডি করা হয়েছে।
কৃষক মান্ডিতে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধানের পাশাপাশি আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন দাবি উঠছে। ফলন ও বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে এখানে আলু চাষিদের অনেক সময়ই মন্দার মুখ দেখতে হতো। কৃষিবিমা, কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। রাজ্য সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের পাশেই আছে বলে মত।
২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান অঞ্চলে কাজের খতিয়ান দেখতে গিয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী তথা পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের মুখোমুখি হল আরপ্লাস নিউজের ক্যামেরা।
তাঁর কথায়, এলাকায় কৃষি মান্ডির কারণে ফসলের অভাবি বিক্রি বন্ধ হয়েছে।
পাশাপাশি খরা এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণের জন্য কৃষি বিমা চালু হয়েছে।
কৃষি বিমার প্রিমিয়ামের টাকাও রাজ্য সরকারের তরফেই মেটানো হচ্ছে। চালু হয়েছে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে বলে জানান স্বপনবাবু।
এছাড়া এলাকার সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পৌঁছে গেছে গ্রামের মেয়েদের হাতে।
প্রচারের ফাঁকে এদিন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুনীল কুমার মণ্ডল বলেন, “উন্নয়নের কাজে বাংলা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার। কাটোয়া থেকে কালনা একাধিক গ্রাম ভাঙনের গ্রাসে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এলাকার ভাঙন রোধে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। তবে টাকা এখনও এসে পৌঁছয়নি।”
লোকসভা ভোটে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য দিল্লি জয়। দেশ জুড়ে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ নতুন ভোটারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নতুন ভোটার এই রাজ্যে।
তাদের উদ্দেশে সুনীলবাবু বলেন, “দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যে সরকার থাকবে অবশ্যই তাকে নির্বাচন করা উচিত নতুন প্রজন্মের ভোটারদের।”
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদারের কথায় উঠে এলো অঞ্চলের কৃষকদের অভাবের কারণে আত্মহত্যার কথা।
সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “কৃষকরা রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই সরকারের কাছেই উপেক্ষিত। ক্ষমতায় এলে কৃষকের দারিদ্র দূর করব, পিপিপি মডেলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নয়ন করার লক্ষ্য থাকবে। পাশাপাশি অঞ্চলের কর্মসংস্থান, এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন আমার লক্ষ্য হবে।”
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সিপিআইএম-এর প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাঁর কথা উঠে এলো ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের ব্যাপক অনিয়মের কথা।
৩৪ বছরে বাম শাসনে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, দারিদ্রসীমা ৬০% থেকে ২০% কমিয়ে আনা হয়েছিল বাম আমলেই। সংগঠন এবং জনসমর্থন নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গণতান্ত্রিক রীতি মেনে ভোট হলে জনাদেশ অবশ্যই উন্নয়নের পক্ষেই যাবে।”
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী সুনীল কুমার মণ্ডলের কন্ঠে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ।
আবার বিরোধী দল কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীর কথায় উঠে এলো এলাকায় উন্নয়নের শ্লথ গতি ও কৃষক আত্মহত্যার বিষয়ে সরকারের উপেক্ষার কথা।
কৃষক মান্ডি, কৃষিবিমা এবং কিষান ক্রেডিট কার্ডে উপকৃত হয়েছেন এলাকার কৃষকরা, অন্তত পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে। তবে ভোট অন্য জিনিস।
ভিড় মানেই ভোট নয়। প্রতিশ্রুতি মানেই শেষ কথা নয়। ভোটের ব্যারোমিটার তাই বৈশাখী উত্তাপের সঙ্গে উঠছে-নামছে।
২৯ এপ্রিল এর কতটা প্রভাব পড়ে আপাতত সেই জল মাপতেই চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলি।