Date : 2024-04-20

রক্তের বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল কেরল! আজও অন্ধকারে বিজ্ঞান….

ওয়েব ডেস্ক: প্রকৃতির কৃপায় ভারতবর্ষ ৬টি ঋতুর ছোঁয়া পায়। গ্রীষ্মের উষ্ণতায় শান্তির বারি সিঞ্চন করতে আসে বর্ষা। তেমনই এক বর্ষাকালের দুপুরে অস্বাভাবিক বৃষ্টির সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই দেশ। কেরলের সেই বৃষ্টির দিনের কথা ভুলবে না সেই রাজ্যের বাসিন্দা তথা দেশবাসী। বিজ্ঞান পরীক্ষা করে যা বলে তা শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে আপনার। ২০০১ সালের ৩ রা জুলাইয়ের দুপুর, আর চারটে বর্ষার দিনের মতোই সকাল থেকেই কেরলের আকাশের মুখভার।

দুপুর গড়াতেই নেমে এলো মুশলধারে বৃষ্টি। না যেমন তেমন বৃষ্টি নয়, আঁশটে গন্ধযুক্ত রক্তের বৃষ্টিতে স্নাত হয়েছিল সেদিন কেরল। আতঙ্কে মানুষ পথ-ঘাট ছেড়ে পালিয়েছিল যার যার ঘরে। মুশলধারে প্রায় মিনিট ২০ ধরে আকাশ থেকে পড়েছিল। যতটা জায়গা জুড়ে এই বৃষ্টি হয়েছিল ততটা স্থানে গাছের পাতা খসে পড়ে গিয়েছিল। কেবল মাত্র লাল ফোঁটা নয় গোটা রাজ্যের মানুষ সেদিন আকাশ থেকে কালো, হলুদ এমনকি সবুজ বৃষ্টিও হতে দেখেছিল বলে দাবি করেছে।

যথারীতি ব্লাড রেন নিয়ে মানুষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় গুজব। প্রথমে বিজ্ঞানীরা এই বৃষ্টিকে বলেছিলেন কোন রঙের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টি বা অ্যাসিড রেন । এই বলে তুচ্ছ বললেও শেষ পর্যন্ত ল্যাবোটারিতে ওই বৃষ্টির জল পরীক্ষা করতে গিয়ে চক্ষু কপালে ওঠে বিজ্ঞানীদের।

আরও পড়ুন : আরবের তীরে ড্রাগনের মেলা

তারা বৃষ্টির ফোঁটার মধ্যে জীবিত একধরনের কণিকা দেখতে পান, যার গুণাবলী প্রাণী দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সঙ্গে একেবারে মিলে যায়। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষার পর সেখান থেকে ডিএনএ-র কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীকালে আরও উন্নত মেশিনে পরীক্ষা করার পর ওই কনিকাগুলির মধ্যে পাওয়া গেছে রক্তের অবস্থিত ডিএনএ-র অস্তিত্ব। আরও অবাক হবেন শুনলে ওই ডিএনএ মানুষের সেটাও প্রমানিত হয়েছে পরীক্ষার মাধ্যমে। কোথা থেকে এলো এত মানুষের রক্ত।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির ফোঁটাও ছুঁতে সাহস করে না বাল্ট্রার ভূমি!

এ কথা ভেবে চমকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরাই। ২০০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের গডফ্রে লুইস ও সন্তোষ কুমার এই বিষয়ে একটি বিতর্কিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তারা প্রস্তাব করেন, রক্তবৃষ্টিতে যে পার্টিকল আছে সেগুলো বহিঃজাগতিক।

কেরালার রক্তবৃষ্টি ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে যে গবেষণা করা হয় তাতে বলা হয় যে খুব সম্ভবত কোনো উল্কাপিণ্ডের বিস্ফোরণের কারণে এবং সেসময় বৃষ্টিপাতের কারণে বৃষ্টির জলের বর্ণ লাল হয়েছিলো। পরে ভারতের আরেকদল গবেষক বলেন যে স্থানীয় কোনো স্থলজ শৈবালগোত্রের বায়ুতে ভাসমান স্পোরের উপস্থিতির কারণে বৃষ্টির জল লাল বর্ণ ধারণ করেছিলো। এখনও পর্যন্ত এই বৃষ্টির গণনা করে দেখা গেছে, প্রতি লিটার জলে প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম কঠিন পদার্থ বিদ্যমান।

এই গণনা থেকে বিজ্ঞানীগণ জানান, কেরালায় যে পরিমাণ রক্তবৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০,০০০ কিলোগ্রাম পরিমাণ লাল কণিকা ভূমিতে পতিত হয়েছিলো। একে একে অ্যাসিক রেন, ডাস্ট রেন থিওরি সবই খারিজ হয়ে যায়।এই কণাগুলো কিভাবে জীবিত রইল এবং রক্তের লোহিত কণিকার গুণ সম্পন্ন হয়ে কিভাবে তা বৃষ্টি হয়ে পড়ল আজও এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেনি বিজ্ঞান।