Date : 2024-04-24

উল্টোরথ বলে পুরীতে আসলে কোন অনুষ্ঠান নেই, জানুন আসল তথ্য…

ওয়েব ডেস্ক: রথযাত্রার দিন পুরীর মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জগন্নাথ দেব। আমরা বাঙালীরা সেই যাত্রাকে বলে থাকি রথযাত্রা বা সোজারথ।

রথযাত্রার ঠিক ৮ দিনের মাথায় গুন্ডিচা মন্দির থেকে তিনি যাত্রা করেন নিজ ধাম পুরীর মন্দিরের উদ্দেশ্যে। এই দিনটিকে বাঙালীরা বলেন উল্টোরথ।

কিন্তু ওড়িশায় এই দিনটিকে বলা হয় বাহুরাযাত্রা। এখন আপনি বলতেই পারেন গুন্ডিচা দেবী হলেন জগন্নাথ দেবের মাসি। ইতিহাস বলে এই তথ্যও ভুল জানি আমরা। গুন্ডিচা দেবী ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুন্মের স্ত্রী।

রুদ্ধদ্বারে জগন্নাথ মন্দির নির্মানকালে বিশ্বকর্মার কাজে ভঙ্গ দিয়েছিল তিনিই। তাই এই কদিন হাওয়া বদল করতে জগন্নাথ দেব যান রাণী গুন্ডিচার নামাঙ্কিত মন্দিরে। ৮ দিন অতিক্রান্ত হলে তিনি রওনা দেন মন্দিরের উদ্দেশ্যে। পথে তাঁর রথ থামে মাসির বাড়ির কাছে।

আরও পড়ুন: শূন্যে ভাসছে মন্দিরের থাম! কাপড় রাখলেই হবে সৌভাগ্যপ্রাপ্তি

কি কারণে শুনলে চমকে উঠবেন। জগন্নাথদেবের প্রিয় খাবার পোড়াপিঠা খাওয়ার জন্য থামেন এই মন্দিরের কাছে। পুরীর মন্দিরে তিনি যেন জীবন্ত দেবতা। ভক্তের কাছে তিনি মনুষ্যরূপেই যেন বিরাজমান, তাই সকালে উঠে সানুষের মতোই দাঁতন করে তবেই আহার গ্রহণ করেন। জগন্নাথ দেব খাদ্যরসিক, তাই ৫৬ ভোগের প্রস্তুতি থাকে রোজই। এর পর তিনি যাত্রা করেন রাজার গৃহের উদ্দেশ্যে।

সেখানে মন্দির থেকে এসে উপস্থিত হন স্বয়ং লক্ষ্মী দেবী, না পায়ে হেঁটে নয়, মন্দিরের পান্ডারা তাঁকে নিয়ে আসেন। জগৎপালক শ্রী হরিকেও ভার্যার কাছে জবাবদিহি করতে হয় তিনি এতদিন কোথায় ছিলেন! এইখানেই রাজার সামনে হয় ভগবানের জড়মূর্তির পার্থিবলীলা।

আরও পড়ুন; পুরীর রথের এই বিশেষ তথ্য অবশ্যেই জেনে রাখুন

আর ভক্তদের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে আনন্দের শেষ থাকে না। রাজার মধ্যস্থতায় নাকি জগন্নাথ দেব পত্নীর মানভঞ্জন করে যাত্রা করেন মন্দিরের উদ্দেশ্যে। মন্দিরের দরজায় পৌঁছে আরও তিনদিন ধরে রথেই বসে থাকেন। আর সেখানেই তিনদিন ধরে চলে স্বর্ণবেশ, অধরপনা ও নীলাদ্রি ভেজের উৎসব।

স্বর্ণবেশ: এদিন পুরীর মন্দিরের রত্নভান্ডার খুলে দেওয়া হয়। কোটি কোটি টাকার মণি-মানিক্য ও স্বর্ণালঙ্কারে সাজানো হয় ত্রিমূর্তিকে। সেই রূপ দর্শন করতে কাতারে কাতারে মানুষ আসেন মন্দিরে। রথে সওয়ার জগৎপালকের রূপ দর্শন করে নিজেকে ধন্য করেন ভক্তরা।

অধরপনা- স্বর্ণবেশের পরেরদিন হয় অধরপনা উৎসব। এইদিন একটি বড় জগের মতো মাটির পাত্রে বিভিন্ন মিষ্টান্ন এবং খাবার দিয়ে ঘোল প্রস্তুত করা হয়। জগের মতো দেখতে সেই মাটির পাত্রে রাখা হয় ওই বিভিন্ন খাবারের ঘোল। তারপর ভেঙে ফেলা হয় পাত্র। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই খাবার দেবতা বা মানুষ কেউই গ্রহণ করেন না। জগন্নাথদেবের উপস্থিতিতে সমস্ত অতৃপ্ত আত্মারা আসেন তাঁর কাছে সাক্ষাৎ করে মুক্তি চাইতে। তাই তিনি সেই খাবারের ব্যাবস্থা করেন অতৃপ্ত আত্মাদের জন্য। তাঁকে দর্শন করে মুক্তিপান আত্মারা, এমনটাই মনে করা হয়।

আরও পড়ুন: জানেন, “মান্ধাতার আমলের গল্পটা” আসলে কি!

নীলাদ্রি ভেজ- এইদিন পুরীর মন্দিরে ত্রিমূর্তি প্রবেশ করার দিন। এদিনও হয় এক রঙ্গতামাশা। বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবী মন্দিরে নির্বিঘ্নে পৌঁছে গিয়ে আসন গ্রহণ করলেও দারুন কাণ্ডকারখানা শুরু হয় জগন্নাথ দেব ও তাঁর ভার্যা লক্ষ্মীদেবীর মধ্যে। জগন্নাথ দেবের মূর্তি প্রবেশের সময় স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী নেমে এসে মন্দিরের মূল ফটক বন্ধ করে দেন। ভিতর থেকে এতদিন বাইরে থাকা কৈফিয়ত চান জগন্নাথ দেবের থেকে। শেষে তাঁর ভক্তদের অনুরোধে নাকি দরজা খোলেন লক্ষ্মীদেবী। এই অনুষ্ঠান ঘিরেও ঠাট্টা তামাশার শেষ থাকে না ভক্তদের মধ্যে। এইভাবে শেষ হয় একবছরের মনে রথযাত্রার অনুষ্ঠান।

#Newsrplus_Biswas_Abiswas

বিশ্বাস অবিশ্বাস – বুদ্ধি দিয়ে যার ব্যাখ্যা মেলে নাদেখুন আজ (10/07/19) রাত ১০ টায় শুধুমাত্র #Rplusnews এ#Newsrplus, #Biswas_Abiswas,

Posted by RPLUS News on Wednesday, July 10, 2019

এই লোকাচার সম্পূর্ণভাবেই মনুষ্যকল্পিত। পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ দেব ভগবানের থেকেও মনুষ্যগুণসম্পন্ন। তাঁকে ভক্তকুল জীবন্তরূপে কল্পনা করেন। তাঁকে মনুষ্যরূপে কল্পনা করে নিয়েই এই অনন্য অনুষ্ঠান ও লোকাচারের আয়োজন করা হয় পুরীতে।