কলকাতা: ফের বেফাঁস মন্তব্য এবং সেই ভুলকে ঢাকতে আরও বড় ভুল করে বসলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। লোকসভা ভোট প্রচারে অমিত শাহর উত্তর কলকাতায় রোড শো কে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে মিছিল বিদ্যাসাগর কলেজের দিকে এগোতেই তুমুল ভাঙচুর শুরু হয়। ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় শতাব্দী প্রাচীন কলেজে রাখা পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি। ঘটনার দায় নিয়ে দুই দলের মধ্যে যখন দোষারোপের পালা চলছে তখনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ফের আলপটকা মন্তব্য করে বসেন। “সহজ পাঠ”-র রচয়িতা পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই মন্তব্যকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা ছড়ায় বিভিন্ন মহলে। এবার বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে ফের বিতর্কের সৃষ্টি করলেন বাবুল সুপ্রিয়।
বৃহস্পতিবার কলাকুশলীদের নিয়ে বিজেপির অরাজনৈতিক সংগঠন “খোলা হাওয়া” অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করলেন, সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অন ক্যামেরায় সংবাদ মাধ্যমের সামনে রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরকে ততক্ষণে ‘ঘেঁটে ঘ’ করে ফেলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। এখানেই শেষ নয় তামাশার। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে বাবুল সুপ্রিয় নিজের ভুল স্বীকার করতে গিয়ে আরও বিতর্কের সৃষ্টি করেন। তিনি লেখেন, রাজা রামমোহন রায় তাঁকে এসএমএস করে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাঁকে! ভুল স্বীকার করতে গিয়ে এই ধরনের মন্তব্য রীতিমতো ব্যঙ্গাত্মক ও মণীষীদের প্রতি অপমানজনক আচরণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
নেটিজেনদের একটি বড় অংশের মত, মণীষীদের নিয়ে এইধরনের মতামত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে একজন মন্ত্রীর তরফ থেকে এই আচরণ অত্যন্ত নিন্দার। কিছুদিন আগে যাদবপুরে গণবিক্ষেভকারীদের একাংশকে NRC-এর সম্পূর্ণ নাম জানতে চাওয়া হলে অনেকেই তার সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। এই নিয়ে ব্যঙ্গ করে যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু কালকের ঘটনায় নিজের ভুল ও তার আজব ব্যাখ্যা দেখে স্তম্ভিত সকলেই। তিনি আরও বলেছেন, “সত্যি একটা ভুল তো করেছি। বিদ্যাসাগর নিয়ে বলবার সময়ে বিধবা বিবাহ বলতে গিয়ে বিধবা বিবাহ তো বলেছি, তার সঙ্গে সতী প্রথার অবলুপ্তিও জুড়ে দিয়েছি। আপনারাও মাফ করে ফেলুন বলতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু পারবেন কি? তবে আর যাই করি না কেন, মানুষের ক্ষতি কিন্তু করি না, বৃষ্টির দিনে চা-তেলেভাজার সাথে ডিসকাস করার মতো একটা টপিক তো পেলেন।” এতবড় ভুল করেও নিজের ভুলকে স্বীকার করতে তিনি অত্যন্ত অনমনীয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়াল, এ রাজ্যের দিলীপ ঘোষ সহ বহু বিজেপি নেতার মুখে মণীষীদের নিয়ে ভুল ও ব্যঙ্গক্তি শোনা গেছে। এমনকি বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা দিয়ে হাস্যকর হয়েছেন বিজেপির অনেক নেতা মন্ত্রী। এবার সেই তালিকায় নিজের জায়গা করে নিলেন বাবুল সুপ্রিয়।