ওয়েব ডেস্ক : খাতায় কলমে ভারতে ঘুষ নেওয়ার হার কমলেও এখনও তার প্রকোপ সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ করছে। সংখ্যাতত্ত্ব এক কথা বলে, বাস্তব বলে অন্য কথা। লোকাল সার্কেল এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া-র সর্বশেষ সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে সরকারি কর্মচারী-অফিসারদের ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন অন্তত ৫০ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক। বাস্তব অভিজ্ঞতায় এই হার কিন্তু আরও বেশি। কারণ, সমীক্ষায় সিকিম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত বোন অর্থাৎ সাত রাজ্যকে ধরা হয়নি। ধরা হয়নি নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ-কে। হিমাচল প্রদেশকে। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ভারতের অন্তত ১১টি রাজ্যে জমি সংক্রান্ত কাজে কিংবা সম্পত্তি নথিভুক্ত করতে গেলে ঘুষ দিতে তুমি বাধ্য। সবাই হাঁ করে আছে। সেই মুঘল আমল থেকে একই বন্দোবস্ত। ইংরেজ আমলেও এই বন্দোবস্ত রোধ করা যায়নি। উলটে, রবার্ট ক্লাইভ থেকে ওয়ারেন হেস্টিংসের মতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাঘা শাসকেরাও সুবে বাংলার রাজ্যপাট সামলাতে গিয়ে ঘুষখোর হয়ে গিয়েছিলেন। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, সম্পত্তি রেজিস্ট্রিকরণে ঘুষ খাওয়ার হার ২৬ শতাংশ। ছটি রাজ্যে কোতোয়ালি বা পুলিশ সব চাইতে বেশি ঘুষ খায়।
আরও পড়ুন : হংকংয়ে গণতন্ত্রীদের জয়
সর্বভারতীয় হার ১৯ শতাংশ। তার পরেই রয়েছে পরিবহণ দফতর এবং পুর দফতর। উভয়েরই বখরা ১৩ শতাংশ। মধ্যপ্রদেশ সেই রাজ্য যেখানে পুর দফতর সব চাইতে বেশি ঘুষ খায়। বিভিন্ন রাজ্যে কে কত ঘুষ খায়, সেই বিস্তারিত হিসাবে না গিয়েও বলা যায় পশ্চিমবঙ্গ আগেও যেমন ধোয়া তুলসীপাতা ছিল না, এখনও নয়। এ রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের ঘুষ খাওয়ার হার ৪৬ শতাংশ। দিল্লিতেও তাই। রাজারাজড়াদের রাজ্য রাজস্থানে সেই হার ৭৮ শতাংশ। উত্তর প্রদেশে ৭৪ শতাংশ। বিহারে ৭৫ শতাংশ। ঝাড়খণ্ডে ৭৪ শতাংশ। নয়া রাজ্য তেলেঙ্গানায় ৬৭ শতাংশ। ছত্তিশগড়ে ৫৭ শতাংশ। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্না এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির আপন রাজ্য গুজরাতে ঘুষ খাওয়ার হার ৪৮ শতাংশ। অন্ধ্রপ্রদেশে ৫০ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ৬২ শতাংশ। কর্ণাটকে ৬৩ শতাংশ। মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে ৫৫ শতাংশ। পাঞ্জাবে ঘুষ খাওয়ার হার ৬৩ শতাংশ। হরিয়ানায় ৪৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে খাতায় কলমে কম ঘুষ খায় কেরল এবং গোয়া। যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ।
আরও পড়ুন : টিকিটে মাত্র ৪৯ পয়সা বেশি দিলেই পাবেন ১০ লক্ষ টাকার বিমা
এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের নজরদারির চোটে অবশ্য সরাসরি হাতে হাতে উপরি টাকা নেওয়ার ঝোঁক একটু কমেছে। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৩.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬০ শতাংশ, এই বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ। যাঁরা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৬১ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাঁরা যেখানে থাকেন সেই রাজ্য কিংবা শহরে দুর্নীতির অভিযোগ জানানোর কোনও সরকারি হেল্পলাইন নেই। কিংবা থাকলেও দিল্লিতে জাহাঙ্গির-নূরজাহানের সেই দুর্নীতি ও অনাচার-বিরোধী ঘণ্টা ঝোলানোর মতো। গর্দান যাওয়ার ভয়ে কোনও প্রজা সেই ঘণ্টা বাজাতে সাহস করে না।