ওয়েব ডেস্ক:- শেষ হতে চলেছে একটা গোটা বছর ২০১৯। একটি বছরের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হচ্ছে এই শতাব্দীর আরও একটি দশক। গোটা বছর জুড়ে রাজ্য রাজনীতির হাল হকিকত কি ছিল? কোথায় ঘটল বড়সড় দুর্ঘটনা? এক নজরে দেখুন রাজ্য, রাজনীতির হাল হকিকত।
১.নদিয়ার তৃণমূল বিধায়ক খুন:- বছরের শুরুতেই সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন নদিয়ার তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়। ঘটনার জেরে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারা পৌঁছে যান বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের বাড়িতে। দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে নদিয়া। পুলিশি তৎপরতায় গ্রেফতার করা হয় সুজিত মণ্ডল ও কার্তিক বিশ্বাস নামে দুই অভিযুক্তকে। তাদের জেরা করে খোঁজ মেলে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ কুণ্ডারির। উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের। এরপর নিহত বিধায়কের স্ত্রী সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসকে লোকসভা ভোটে রাণাঘাট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস।
২.ফণী ও বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব:- চলতি বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা। ফণীর ব্যাপক প্রভাব পড়ে এই রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। তার কয়েকমাস পর নভেম্বরে ফের ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঁছড়ে পড়ে রাজ্যের দক্ষিণের জেলাগুলিতে। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্থ হয় দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলা। শীতের ফসল নষ্ট হয় ঝড়ের প্রভাবে।
৩. পেঁয়াজসহ শাকসব্জি অগ্নিমূল্য:- পেঁয়াজসহ একাধিক শাকসব্জীর দাম আকাশ ছোঁয়া হতে শুরু করে পুজোর সময় থেকেই। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জেরে মাথায় হাত পড়ে মধ্যবিত্তের। পেঁয়াজের দাম হাহাকার কমাতে আসরে নামে রাজ্য সরকার। রেশনে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
৪. এনআরসি আতঙ্ক:- পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পর একে একে নাগরিকত্ব হারান প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর বাস্তুচ্যুত হতে হয়। অসমে তৈরি ডিটেনশন ক্যাম্প ও এনআরসির গুজব ছড়াতে শুরু করে এই রাজ্যেও। জমির দলিল ও সঠিক পরিচয় পত্র না পেয়ে এনআরসি আতঙ্কে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে উঠে আসতে থাকে একের পর আত্মহত্যার ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে এনআরসি গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন। একই সঙ্গে এনআরসি ও সিএএ আইন সংসদে পাস হয়ে যাওয়ায় সেই আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হয়। সিএএ আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের উত্তরের একাধিক জেলায় রেল অবরোধ শুরু হয়। ভেঙে ফেলা হয় স্টেশন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের বগি। সিএএ ও এনআরসি-র প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫. দিদিকে বলো:- জেলায় ঘুরে ঘুরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সেই বৈঠক থেকে জেলা নেতৃত্বকে কাটমানি নেওয়ার জন্য প্রবল ধমক দিতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী জনসমক্ষে প্রশাসনিক বৈঠকে কাটমানি নিয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে বলেন। রাজ্যজুড়ে কাটমানি নেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয় তৃণমূলের একাধিক জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জেলায় জেলায় জনসংযোগ বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী চালু করেন বিশেষ ফোন পরিষেবার “দিদিকে বলো”। নির্দিষ্ট একটি নম্বর দেওয়া হয়, যেখানে বলা হয়, ঐ নম্বরে ফোন করে রাজ্যের যেকোন প্রান্তের মানুষের দাবি অভিযোগ পৌঁছে যাবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
৬. ডেঙ্গু:- সঠিক সময় বর্ষা না আসায় ও শীত না পড়ায় রাজ্য জুড়ে থাবা বসায় ডেঙ্গু। গাইঘাটার ইচ্ছাপুর, ব্যরাকপুর ও হাবড়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় একাধিক মানুষের। ডেঙ্গুর জন্য স্থানীয় পুরসভা ও হাসপাতালের গাফিলতির দিকে আঙুল তোলেন সাধারণ মানুষ। একাধিক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে আসরে নামেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
৭. স্বপরিবারে শিক্ষক খুন:- একাদশীর সকালে রাজ্যবাসী আঁতকে ওঠেন মুর্শিদাবাদের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ ও তাঁর পরিবারের নৃসংশ খুনের ঘটনায়। রাজ্যজুড়ে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। রাজ্য বিজেপির তরফে দাবী করা হয়, আরএসএস করার অপরাধে শিক্ষককের পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবী নস্যাৎ করে দেয় মৃত শিক্ষকের পরিবার। শেষে ঘটনার কিনারা হয়। জানা যায়, উৎপল বেহেরা নামে এক রাজমিস্ত্রি আর্থিক অসন্তোষের কারণে হত্যা করে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও পুত্রকে।
৮.কাশ্মীরে মুর্শিদাবাদের ৫ শ্রমিক হত্যা:- কাশ্মীরে আপেল তোলার কাজ করতে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ৫ শ্রমিক। সেখানেই জঙ্গিদের হাতে নৃসংশভাবে হত্যা হন তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান একজন শ্রমিক। শোকে ভেঙে পড়ে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা। এরপর রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতায় দ্রুত ৫ শ্রমিকের দেহ নিয়ে আসা হয় সাগরদিঘিতে। সেখানেই তাদের দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।
৯. লোকসভা নির্বাচন:- এইবছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রথম থেকেই নজর কেড়েছিল মোদী-মমতা টক্কর। নিজেদের গড় দরে রাখতে যেমন জেলায় জেলায় মরিয়া প্রচার চালাচ্ছিল তৃণমূল কংগ্রেস তেমনই লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে জেলায় জেলায় সভা করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটে গোটা দেশে বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠ পেয়ে জয়লাভ করে। পাশাপাশি এই রাজ্যেও ১৮টি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। কিন্তু এরপরেই রাজ্যে তিন বিধানসভা কেন্দ্র উপনির্বাচন হয়। খরগপুর সদর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে ভরাডুবি হয় বিজেপির। এমনকি রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের গড় খরগপুরেও খাপ খুলতে পারেনি পদ্ম শিবির।
১০. শালিমার স্টেশনে দুর্ঘটনা:- চলতি বছর অক্টোবর মাসে শালিমার স্টেশনে ভেঙে পড়ে একটি নির্মিয়মান কংক্রিটের ছাদ। সেই ছাদের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের, গুরুতর আহত হন আরও এক শ্রমিক। শালিমার স্টেশনের বেহাল অবস্থার জন্য তীব্র যাত্রী বিক্ষোভ শুরু হয়। মারধর করা হয় স্টেশনের রেল ইয়ার্ড মাস্টারকে। ঘটনাস্থলে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়কে পাঠানো হয় । যাত্রীরা তার কাছে স্টেশনের অব্যবস্থার কথা জানান।