ওয়েব ডেস্ক:- আর মাত্র কয়েক ঘন্টা, তারপরেই নতুন বছর ২০২০-র দরজায় পৌঁছে যাব আমরা। ঘটনা- দুর্ঘটনায় কেটে গেল আরও একটা বছর। বাংলা চলচ্চিত্রের জগৎ কি কি উপহার রেখে গেল আমাদের জন্য? কোন কোন ছবি বক্স অফিসে কেমন বিজনেস করল? সেরার পুরস্কার গেল কার ঝুলিতে? কোন ছবি বা দর্শকদের মনে দাগ কেটে গেল? ফিরে দেখা সেই সব ছবির কয়েক ঝলক।
এই বছর শেষে সেরা ৬ টি ছবির কথা রইল আপনাদের জন্য।
নগরকীর্তন:- কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নগরকীর্তন’ ছবি নিয়ে উৎসাহ ছিল ২০১৮ সাল থেকেই। শহরে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে ঘুরে আসে। ছবিতে ঋদ্ধি সেনের অভিনয় রীতিমতো সারা ফেলে দেয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই জাতীয় পুরস্কার পান অভিনেতা ঋদ্ধিসেন। মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সাচ্ছন্দ্য সবসময়ই যে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এমন নয়। মধু ও পুটির সম্পর্কের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয় নগরকীর্তন ছবিতে অচেনা মোড়কে চেনা প্রেমের গল্প।বক্সঅফিসেও সাফল্য পায় অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত ‘নগরকীর্তন’।
ঘরে বাইরে আজ:- সত্যজিত রায় কয়েক দশক আগে যে “ঘরে বাইরে” যে ছবি করেছেন তার রিমেক বললে কিন্তু ভুল হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “ঘরে বাইরে” উপন্যাসকে আধুনিক সমাজের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করেছেন “ঘরে বাইরে আজ” ছবির পরিচালক অপর্ণা সেন। পরিচালকের কাজের মধ্যে দিয়েই ছবির অভিনবত্ব বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছে। যিশু-তুহিনা-অর্নিবাণের অভিনত এই ছবি স্মৃতির মাইল ফলকে লিখে রাখা ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখাবে। হারিয়ে যাওয়া রাজনীতির সময়, গণহত্যা, গণঅভ্যুত্থানের কাহিনীর টুকরো টুকরো কোলাজ ছুঁইয়ে গেছে ছবিতে।
গুমনামী:- বাংলা ছবির মধ্যে এ বছরের অন্যতম বিতর্কিত ছবি ছিল “গুমনামী”।সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত “গুমনামী” ছবির নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তৈরি। ফলে ছবি নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না। নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে বক্সঅফিসে অবশেষে মুক্তি পায় গুমনামী। যদিও প্রথমদিন থেকেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবিটি একের পর এক সাফল্যের মুখ দেখতে থাকে। ছবিতে টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিতের অভিনয় নিয়ে কোন প্রশাংসাই যথেষ্ট নয়। তেমনই অনবদ্য সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবির ডিটেলিং ও শিল্পভাবনা। মুক্তি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, ছবি মুক্তির পর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি “গুমনামী” ছবিকে।
মিতিন মাসি:- থ্রিলার আঙ্গিকের ছবিতে এই প্রথম একেবারে অন্য ভূমিকায় দেখা গেল কোয়েল মল্লিককে। অরিন্দম শীলের হাত ধরে লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা মিতিন মাসি উপন্যাসের এই প্রথম সেলুলয়েড সংস্করণ হতে দেখা গেল।সিনেম্যাটোগ্রাফি, অকারণ দীর্ঘায়িত নয় এমন চিত্রনাট্য, উচ্চমানের আবহ এবং সঙ্গীত পরিচালনা, ও সর্বোপরি কোয়েল মল্লিকের অভিনয় পুজোয় বাংলা সিনেপ্রেমীদের অন্যস্বাদের ছবি উপহার দিল। পুজোর সময় মুক্তি পাওয়ায় বক্স অফিসে যথেষ্ট ভালো ব্যবসা করতে পেরেছে মিতিন মাসি।
কন্ঠ:- প্রাক্তন, দৃষ্টিকোণের পর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা জুটি এই বছর আরও একবার হিট টলিউডে। চিত্র সমালোচকদের মতে এবছরের সেরা ছবির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কণ্ঠ। শিবপ্রসাদ-পাওলি-জয়ার ত্রিকোণ সমীকরণ বক্সঅফিসে ঝড় তুলেছিল। যা কিছু জীবনের সহজাত, প্রতিনিয়ত যার উপর নির্ভরশীল মানুষের ‘আমি’, তা যদি এক লহমায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন বাঁচাটা বিদ্রোহের সমানুপাতিক হয়ে দাঁড়ায়। সেরকমই নিত্য চলার সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের যাত্রা শুরু করেন অর্জুন মল্লিক , সঙ্গ দেন পৃথা। ল্যারিংস-এ বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ। তাও ফোর্থ স্টেজ। বাঁচতে হলে ভয়েস বক্সটাই বাদ দিতে হবে। কিন্তু কণ্ঠই যাঁর অস্তিত্ব, সেটা বাদ দিয়ে চলবে কী করে? এই ছবিতে বহুল প্রশংসিত হয়েছে জয়া আহসানের অভিনয়। ছবির গল্প মন কেড়েছে দর্শকদের।
পরিনীতা:- বিয়ের পর রাজ-শুভশ্রীর জুটি হিট করল আবার। চেনা ছক ভেঙে একটু অন্যরকম গল্প নিয়ে দর্শকদের মন কাড়ল “পরিনীতা”।শুরুতেই সাফল্য। মেহুল ও তার বাবাইদাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে ছবির গল্প। মেহুল স্কুলে পড়ে, বাবাইদাকে একটু অন্য চোখেও দেখে। জানলা দিয়ে একমনে বাবাইদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। বলা যেতে পারে, মেহুলের ‘ক্রাশ’ বাবাইদা। সেকথা মুখ ফুটে বলে ওঠার আগেই ঘটে অঘটন। আত্মহত্যা করে বাবাইদা। তারপর? শুভশ্রী অভিনয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে ছবির মাঝাখান থেকে নায়িকা একাই কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে পারে গল্পের। তবে ঋত্বিক চক্রবর্তীও কিছু কম যায়নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি উচ্চশিক্ষিত ছেলের চাকুরী পাওয়া ও তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের লড়াই নিয়ে এগিয়েছে ঋত্বিক।