ওয়েব ডেস্ক:- ৭ পৌষ ১২৫০ বঙ্গাব্দ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও ২০ জনকে সঙ্গে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। ১২৯৮সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে মেলা শুরু হয় শান্তিনিকেতনে। সেই মেলায় দিনে দিনে বড় আকার ধারন করতে থাকে। বৈতালিক ও উপাসনার মধ্যে দিয়ে শান্তিনিকেতনে শুরু হয়ে গেল ১২৫ তম পৌষ মেলা। এই মেলা মাত্র ১৭৩২ টাকা ১০ আনা দিয়ে শুরু হয়। কলকাতা দূরদর্শনে প্রথম থেকেই দেখানো হতো পৌষমেলা।
শান্তিনিকেতনের আবাসিকদের মত, এখন পৌষমেলার রূপ অনেকটাই বদলে গেছে। কম্পিউটার, মেবাইলের ব্যাবহার অনেকটা জাঁকিয়ে বসেছে। কাঠের পুতুল, মাটির জিনিস, সাঁওতালি বাঁশি এসবের পাশাপাশি রয়েছে ডোকরা শিল্পের বিপুল সম্ভার। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম পৌষমেলার আয়োজন করেছিলেন কলকাতার কাছে গোরিটির বাগানে। তার পঞ্চাশ বছর পরে, ১৮৯৪ সালে, মহর্ষির ট্রাস্ট ডিড অনুসারে আনুষ্ঠানিক ভাবে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার সূচনা।
প্রকৃতির কোলে যে গ্রামীন চেহারাটা নিয়ে মেলা শুরু হয় এখন তা অনেকটাই বদলে গেছে। শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা এখন বিপুল জনতার মেলা।১৮৯৪ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত এই পৌষমেলা হত একদিনের। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়ার পর পর, ১৯৬১ সাল অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ পর্যন্ত মেলা হত দু’দিনের। কলেবর বৃদ্ধি হওয়ায় সেই সময় থেকে মেলা পূর্বপল্লির মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৬১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মূল মেলা ছিল তিন দিনের। পরে ভাঙা মেলা থাকত আরও বেশ কয়েক দিন। ২০১৬ সালে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে তিনদিনের মেলা শেষ হতেই মাঠ খালি করে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই মেলায় চারদিনের ছাড়পত্র মিলেছে। ২৫ ডিসেম্বর বিপুল জনসমাগম হয় পৌষমেলায়। একই সঙ্গে হয় খ্রীষ্টোৎসব। আশ্রমিকদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরলোকগত আশ্রমিকদের উদ্দেশ্যে শান্তিকামনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পৌষমেলার অন্যতম আকর্ষণ সাঁওতালদের বাজি উৎসব। দেওয়ালিতে বা নববর্ষে হয়তো অনেকেই বাজির প্রদর্শনী দেখেছেন, কিন্তু শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় আতসবাজির প্রদর্শনী অন্যমাত্রা যুক্ত করেছে। ১৮৯৮ সাল থেকে মেলার সময় কলকাতা থেকে হাওয়াই বাজি নিয়ে আসা হত। ছোট আকারে পূর্বপল্লির মাঠে তা পোড়ানো হত।
পরে সুরুল থেকে বাজি নিয়ে এসে তা পোড়ানো হত। সেই বাজি পোড়ানো দেখতে ভিড় করতেন হাজার হাজার মানুষ। পরিবেশ আদালতের রায়ে সেই বাজি পোড়ানো এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলার দূষণবিধি নিয়ন্ত্রণ দেখার জন্য একটি মনিটরিং কমিটিও গড়া হয়েছে। মেলার মাঠের বাউল সঙ্গীত, রাইবেশে, কীর্তন এমন ভাবে মনের গভীরে মিশবে, পৌষমেলা থেকে ফিরে শহরের কলকাকলিতেও সেই সুর যেন সঙ্গ ছাড়ে না।