Date : 2024-04-26

দু’মুঠো গরম ভাতের অভাবে স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি পরিবারের….

উত্তর ২৪ পরগণা: বেঁচে থাকা নুন্যতম প্রয়োজন অন্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অভাব ঘটলে ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে প্রাণ। অন্যের দয়ার উপর নির্ভর করে সামান্য কিছুদিনই এই সমস্যা মিটতে পারে। কিন্তু বাকিদিনগুলো কিভাবে চলবে? বারাসতে নবপল্লির বাণীনিকেতন স্কুল রোডে প্রতিমা অ্যাপার্টমেন্ট এখন সেই চিন্তায় দিন কাটছে একই পরিবারের তিনজনের। অন্তত ২০ দিন ধরে একদানা অন্নের দেখা মেলেনি তাদের। কোনরকমে টিকে আছে প্রাণটুকুই। ঘরে নেই একটি পয়সা। বেঁচে থাকার সব রাস্তাই প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে বারাসতের ব্যানার্জী পরিবারের। তিনতলার এককামরা ফ্ল্যাটের ঘরে গেলে চোখে পড়বে, খাটের উপর বসে আছেন বৃদ্ধ কমল ব্যানার্জী।

আরও পড়ুন : নেই চিকিৎসার খরচ, ক্ষতস্থানে জোঁক রক্তচুষে উপশম করে বেদনার

Asian rice.

হার্টের অসুখের কারণে বুকে বসানো হয়েছে পেসমেকার। পাশেই রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ৭৮ বছরের গীতা ব্যানার্জী। পেশায় প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকার দুই পা ফুলে রয়েছে কিডনির অসুখে। চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, একবেলা ভালো করে খাওয়াও জোটে না তাঁর। স্বামী কমল ব্যানার্জী দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের অবসর প্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। সম্পূর্ণ রোজগারহীন অবস্থায় নিজের ওষুধ পথ্য কিছুই মিলছে না তাঁর। তাঁদের সঙ্গেই থাকেন বিবাহ বিচ্ছিন্না মেয়ে গার্গী। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি প্রাপ্ত তিনি। শুনলে অবাক হবেন, এম.এ, পিএইচডি ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও মেলেনি কোন চাকরি। ছোট মেয়ে কস্তুরি বারাসতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি কিছু সহায়তা করতেন বাবা-মাকে।

তবে সেই সাহায্যও এখন আসছে না বলে দাবি অসহায় দম্পতির। বৃদ্ধ কমলবাবু ৯২ সালে অবসর গ্রহণ করার পর দুই মেয়ের উচ্চশিক্ষা ও বিবাহে সমস্ত সঞ্চিত অর্থই খরচ করে ফেলেন। কিন্তু বড় মেয়ে বিবাহ বিচ্ছিন্না হয়ে এখন বাবা মায়ের সঙ্গেই থাকেন। গার্গীদেবী জানিয়েছেন, যোগ্যতা নিয়ে চাকরির সন্ধান করে বহু জায়গায় আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কোথা থেকে কোন রকমে একটা চাকরি মেলেনি তাঁর।

আরও পড়ুন : তিনকুলে নেই কেউ, গানই তাঁর সঙ্গী, শুনেছেন রাণুর “এক প্যয়ার কা নগমা”?

বিদ্যুতের বিল দিতে না পাড়ায় ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ। গার্গীর কথায়, ‘এক বার তো বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিই। কিন্তু পারিনি। বেঁচে থাকার আর কোনও উপায় না পেয়েই জেলাশাসকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছি ৩০ জুলাই।’ চোখের জল সামলে বৃদ্ধ কমল বলেন, ‘আমাদের চাকরিতে পেনশন ছিল না। চাকরির শেষে যা টাকাপয়সা পেয়েছিলাম, তা মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো আর বিয়ে দিতেই খরচ হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু টাকা দিয়ে থাকার জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলাম।

আরও পড়ুন : পুত্রশোক কাটিয়ে পুত্রবধুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিয়ে দিলেন শ্বশুর মশাই

এখন একটা পয়সা নেই হাতে। বাধ্য হয়ে ভিক্ষে করতে হচ্ছে। প্রতিবেশী শ্যামল সরকারের সাহায্যের জন্য কোনও ভাবে বেঁচে আছি।’ প্রতিবেশী শ্যামল সরকার জানিয়েছে, একদিন সকালে দেখি এক মহিলা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন। শুনলাম কুড়িদিন ধরে কিছুই খেতে পান নি। নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করলাম চাল-ডাল দিয়ে। কিন্তু এভাবে একার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না সাহায্য করার। পুরো বিষয়টি বারাসতের জেলা শাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়কে জানানোর পর তিনি বলেছেন, বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করা হবে ওই পরিবারের জন্য, পাশাপাশি এই মুহুর্তে তাঁদের জন্য কিছু খাবারও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এমন করুণ পরিস্থিতিতে তাঁদের আপাতত অন্যের দেওয়া মুড়ি-বিস্কুট খেয়ে চোখের জলে দিন কাটাতে হচ্ছে।