ওয়েব ডেস্ক: “নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।” হ্যাঁ, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সংহতি প্রমাণিত সত্য। ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে এভাবেই দেশের সকল সম্প্রদায় দীক্ষিত হয়েছিল দেশপ্রেমের মন্ত্রে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস নেহাত ছোট নয়। সারা দেশের হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময় লেখা হয়েছিল এর ইতিহাস। পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এমনকি লিঙ্গভেদে প্রতিটি মানুষের বলিদানের মঞ্চই ছিল আজকের বৃহত্তম প্রজাতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষ গড়ে ওঠার কেন্দ্রস্থল।
কিন্তু প্রায় ২০০ বছরের লড়াইয়ের এতবড় ইতিহাসের যে অংশটুকু আমরা জানি তা নগন্যই। দেশের আনাচে কানাচে এমন সব মানুষ এখনও রয়ে গেছেন যাঁদের সহযোগিতা কখনও ভুলতে পারবে না ভারতবর্ষ। ১৫ আগস্ট দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়া একদিনের ছিল না।
দেশের সংবিধান যেমন ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি গৃহিত হয়, তেমন দেশের জাতীয় পতাকাও জন্মদিন ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই। ২৪টি দণ্ডযুক্ত অশোকচক্র সহ এই আয়তাকার তেরঙ্গা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কর্তৃক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের “স্বরাজ” পতাকার ভিত্তিতে নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল। ইতিহাস এমনটাই দাবি করে। কিন্তু এই পতাকার নকশার পিছনে রয়েছে আরও একজন মুসলিম মহিলার অবদান, যাঁর নাম সুরাইয়া বদরুদ্দিন তায়াবজি।
ইতিহাসের পাতায় যাঁর নামও রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। ভারতের পতাকার রূপকারের নাম করলে প্রথমেই উঠে আছে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার নাম, কিন্তু তাঁরও আগে সুরাইয়া এই নকশা তৈরি করেন বলে জানা যায়। তাঁর তৈরি তেরঙ্গার নকশা প্রথম গৃহিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই। জনৈক এক ব্রিটিশ লেখকের লেখায় বলা হয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকা আসলে সুরাইয়া বদরুদ্দিন তায়াবজি নামে এক মুসলিম মহিলার তৈরি। এই সময় গণপরিষদে ঘোষণা করা হয় ভারতের জাতীয় পতাকা এমন হতে হবে যাতে সব জাতি সব ধর্মের মানুষ এই পতাকা গ্রহণ করে শ্রদ্ধার সঙ্গে।
সেইমত আয়তাকার তেরঙ্গা পতাকার মাঝে রাখা হয় অশোকচক্রকে। যা অশোকসম্রাট নির্মিত অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া। যেহেতু সম্রাট অশোক সব সম্প্রদায়ের কাছে ছিলেন শ্রদ্ধেয় সেহেতু ২৪টি দন্ডযুক্ত অশোকচক্র স্থান পায় ভারতের জাতীয় পতাকায়। ভারতের জাতীয় পতাকা সৃষ্টির ইতিহাসে এভাবেই জড়িত আছেন এক মুসলিম মহিলার নাম। তিনিও হাত লাগিয়েছিলেন কোটি কোটি ভারতবাসীর আবেগের জাতীয় পতাকা তৈরিতে। পরবর্তিকালে উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্বার্থে তাঁর নামও ধামাচাপা পড়ে যায় লক্ষ লক্ষ ভারতীয়র কাছে। এই দুরদর্শী নারী নিভৃতেই রয়েছেন তিরঙ্গার জন্মলগ্নের সময় থেকে।