কলকাতা: শনিবার সন্ধের পর থেকে হঠাৎ-ই মেট্রোর টানেল খুঁড়তে গিয়ে বেনজির বিপর্যয় সৃষ্টি হয় কলকাতায়। গভীর রাতে একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে হঠাৎ-ই দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের সেই বাড়িগুলিই ভেঙে পড়তে শুরু করে। রবিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বাড়িতে ফাটল ধরে। ঘটনার জেরে প্রায় ২৮৪ জন লোক ঘর ছাড়া। প্রশ্ন উঠছে সুরঙ্গ খোঁড়ার আগে তবে বিশেষজ্ঞরা কেন এই বিষয়ে সতর্ক করেননি? মেট্রো সুত্রের খবর, টানেল করার সময় বৌবাজার এলাকার নিচে হঠাৎ-ই ওয়াটার পকেটের মুখে পড়ে মেট্রোর বোরিং মেশিন।
এর জেরেই ধসে পড়ে মাটির উপরের অংশ। মাটি পরীক্ষা করার সময় এই ধরনের ওয়াটার পকেটের অস্তিত্ব বুঝতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা। পরে বোঝা যায় এই এলাকায় মাটির নীচে তৈরি হয়েছিল একাধিক অ্যাকুইফার সাধারণ মাটি পরীক্ষায় এই ধরনের ওয়াটার পকেট বা অ্যাকুইফারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। ওইসব অ্যাকুইফার একটি বড় এলাকা জুড়ে থাকে। ওই অ্যাকুইফার লিক করেই জল ঢুকে গিয়েছে সুড়ঙ্গে। এর ফলেই ওই ওয়াটার পকেট লাগোয়া মাটি গিয়েছে বসে। ঘটনার জেরে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনে হঠাৎ-ই একসঙ্গে চারটি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়।
ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। প্রবল ক্ষতিগ্রস্থ হয় ওই এলাকার আরও ১৪টি বাড়ি। রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছান কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনার দায় স্বীকার করে নেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলেই খোলা হয়েছে স্পেশ্যাল কন্ট্রোল রুম (নম্বর: ৯৪৩২৬১০৪৭২)। কাল, মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের মত, শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মেট্রোর টানেল খোঁড়ার সময় কেন সতর্কতা অবলম্বন করা হল না? তবে কি গোড়ায় গলদ থেকে গেল? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর একজন বিশেষজ্ঞের মত, সাধারনত টানেল খোঁড়ার সময় ভূগর্ভস্থ জল সুরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে।
সেই জল থামানের জন্য ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক। শনিবার কাজ চলার সময় হঠাৎ-ই হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে , সুরঙ্গের মধ্যে কোনভাবেই সেই জল আটকানো সম্ভব হচ্ছিল না। ঘটনার জেরে বন্ধ করে দিতে হয় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। এরপরেই বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন থেকে একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরার খবর আসতে থাকে।
ওই অঞ্চলে রবিবার সারাদিনই মৃদু কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে ছিল কলকাতা পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। বৌবাজার অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা খালি করে দেওয়া হয়। ওই এলাকার বাসিন্দারা সামান্য কম্পন অনুভব করলেই তাদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সোমবার সকালেও কাটেনি আতঙ্ক, এলাকায় এখনও রয়েছে পুলিশি টহলদারি।