ওয়েব ডেস্ক: ভারতের পূর্ব উপকূলের নিরাপত্তা বাড়ানোর উপর আরও জোর দিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল অতুল কুমার জৈন। ভাইস অ্যাডমিরাল জৈন ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্ব কমান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন। সামরিক পরিভাষায়, ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের (ইএনসি) ফ্ল্যাগ অফিসার কমান্ডিং ইন-চিফ (এফওসি-ইন-সি)। গত শনিবার কলকাতায় আইএনএস নেতাজি সুভাষে নৌবাহিনীর সিম্ফনিক ব্যান্ড কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যান্ড খুবই জনপ্রিয়।
ভাইস অ্যাডমিরাল জৈন বলেছেন, ভারতের পূর্ব উপকূলেই নৌবাহিনীর পরমাণু শক্তি সংহত হয়েছে। বিশাখাপত্তনমে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবমেরিনের পোতাশ্রয়। ফলে বঙ্গোপসাগরে বাইরের দেশের জাহাজ ও ডুবোজাহাজগুলির গতিবিধির উপরে নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। যেহেতু ভারত সরকার পূর্বদিকে তাকানোর নীতি নিয়ে চলছে, তাই নজরদারির পাল্লা মলাক্কা প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে। এখন বঙ্গোপসাগরে আগের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় জাহাজ চলাচল করে। বেসরকারি লাইনার থেকে সামরিক জাহাজের ভিড় কালা পানিতে বেড়েছে। ভাইস অ্যাডমিরাল জানান, ভারতের নৌবাহিনীর কাছে এখন পি-৮১ এয়ারক্রাফট আছে। আকাশ থেকে সমুদ্রের উপর নজর রাখতে এই বিমানের জুড়ি মেলা ভার। আপাতত এই বিমানগুলিকেই মলাক্কা প্রণালী পর্যন্ত গোয়েন্দাগিরি চালানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ উভয় জলযানের গতিবিধির উপরেই পি-৮১ নজর রাখছে। একইসঙ্গে ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জৈন জানিয়েছেন, “ভিনদেশের বন্দরেও আমাদের জাহাজ এখন রুটিনমাফিক নোঙর ফেলছে।”
চীনের যুদ্ধজাহাজ-সাবমেরিন ভারতের জলসীমায় ঢুকছে কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে ভাইস অ্যাডমিরাল বলেন, ভারতের ভূখণ্ড থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যে ইস্টার্ন ইকোনমিক জোন (ইইজেড) সেখানে চীনের রণতরীগুলিকে ‘বন্ধুত্বমূলক প্যাসেজ’ দেওয়া হয়। তবে তারা ভারত ভূখণ্ড থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যে জাতীয় জলসীমা সেখানে ঢোকে না। কিন্তু, ইইজেডেও চীনা নৌবাহিনী নানা ধরনের গবেষণা আর অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। আইনসিদ্ধও নয়। তাই চীনের গবেষণাযানগুলিকে ইইজেড ছাড়ার কথা বলা দরকার।
ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের এফওসি-ইন-সি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি-র নেভি (প্ল্যান) অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তাদের সম্পদ বাড়াচ্ছে। এভাবেই নাম না-করে তিনি শ্রীলঙ্কার হেমবন্তটোটা বন্দর চীনকে লিজ দেওয়ার ইস্যু তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “গত সাত-আট বছরে পিপলস লিবারেশন আর্মি-র নৌবাহিনী খুব দ্রুতগতিতে আধুনিকীকরণ করছে। তাদের রণতরীগুলি পশ্চিম এশিয়ার এডেন উপসাগর পর্যন্ত টহল দিচ্ছে। তাদের এখন দুটি বিমানবাহী ক্যারিয়ার রয়েছে। তাছাড়া, জলের উপর এবং নীচে দিয়ে চলাচল করার উপযুক্ত জলযানও তারা আরও বেশি সংখ্যায় নির্মাণ করছে। কয়েক বছরেই ‘প্ল্যান’ বিপুল শক্তি বাড়িয়েছে। সে কারণেই ভাইস অ্যাডমিরাল জৈন বলেছেন, “মলাক্কা ও সুন্দা পর্যন্ত নিয়মিত টহল দেওয়ার জন্য আমাদেরও আরও বেশি সংখ্যায় বিমানবাহী রণতরী এবং পরমাণু সাবমেরিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।“