ওয়েব ডেস্ক: অনেকের বাড়িতেই গোপাল অথবা কৃষ্ণের মুর্তি আছে।
শ্রী কৃষ্ণের সেবার অন্যতম দিক হল, তাঁর মূর্তির সজ্জা।
শিরে ময়ুর পালক থেকে পায়ের নূপুর পর্যন্ত না থাকলে শৃঙ্গার সম্পূর্ণ হয় না শ্রী কৃষ্ণের।
ভক্তও তাঁকে পরম যত্ন সহকারে সাজাতে কার্পণ্য করেন না।
অনেকেই হয়তো জানেন না শ্রী কৃষ্ণের পাদপদ্মে শোভিত নূপুর যুগল কখনও সমান হয় না।
কেন জানেন? অনেকেই হয়তো ভাববেন এই ঘটনা আসলে ভক্তের উদাসীনতা।
না, ঘটনার নেপথ্য রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী।
পুরাণে কথিত আছে ত্রেতা যুগে শ্রী বিষ্ণুর অবতার রূপে রামচন্দ্র ধরাধামের পাপ নাশ করে সাধুজনের উদ্ধার করতে অবতীর্ণ হন।
দুষ্ট রাবণের দ্বারা সীতা হরণের পর শ্রী রামচন্দ্র অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন।
একদিন শ্রী রামচন্দ্র বনের মধ্যে একটি স্থানে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভাই লক্ষণ।
স্ত্রী সীতা হারিয়ে ফেলে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য রামচন্দ্র ধনুকটিকে মাটিতে রেখে তার উপর ভর দিয়ে কাঁদতে শুরু করেন।
জাগতিক দুঃখ তাঁকে আবদ্ধ করলেও তিনি ছিলেন পতিত পাবন অর্থাৎ শ্রী রামচন্দ্রের প্রতিটি কাজেরই কোন না কোন উদ্দেশ্য ছিল।
লক্ষণ দেখেন শ্রী রামচন্দ্র যেখানে কাঁদছেন সেখানে চোখের জল পড়লেও তা রক্ত হয়ে বয়ে নদীর রূপ নিচ্ছে।
লক্ষণ রামচন্দ্রকে বিষয়টি অবগত করান।
শ্রী রাম তাঁর ধনুকটি সরিয়ে দেখেন ধনুকে চাপা পড়ে একটি ব্যাঙ মরণাপন্ন।
ব্যাঙের রক্ত এবং শ্রী রামের চোখের জল মিশে বৈতরণী নদী সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রী রাম তখন বুঝলেন এই ব্যাঙ কোন সাধারণ ব্যাঙ নয়।
তিনি ব্যাঙকে প্রশ্ন করলেন, “সর্পের দ্বারা আক্রান্ত হলে তো তুমি আর্তনাদ করো, আমার ধনুকের নিচে পড়ে তুমি কষ্ট পেয়ে প্রতিবাদ করলে না কেন?”
উত্তরে ব্যাঙটি তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু,যখন কোন সর্প আমায় আক্রমণ করে, তখন আর্তনাদ করে আপনকে নালিশ জানাই।
কিন্তু যখন আপনার কাছেই আমার প্রাণ সঙ্কটে তখন কাকে নালিশ জানাবো?”
রামচন্দ্র প্রসন্ন চিত্তে তখন তাঁকে ত্রাণ করার জন্য বললেন, “তোমার জীবন ফিরিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়, কারণ অবচেতন মনে হলেও তুমি আমার দ্বার নিহত হয়েছো, এবার বলো তোমার শেষ ইচ্ছে কি?”
ব্যাঙ তখন নিজের আসল পরিচয় দিয়ে বলল, “আমি ছিলাম কর্ণব মুনি।
আমার গুরু ছিলেন বিশ্বাবসু মুনি।
একদিন গুরু চরণ সেবা করতে গিয়ে গুরু-অঙ্গে নখের-আঁচর দিয়ে ফেলি।
গুরুর অভিশাপে ব্যাঙ কূলে জন্ম হয় আমার।
অভিশাপের সঙ্গে সঙ্গে গুরু আমায় আশির্বাদ করে বলেন ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র অবতার রূপে জন্ম নিলে আমার উদ্ধার হবে”, এর সঙ্গে সঙ্গে কর্ণব রামচন্দ্রের কাছে প্রার্থনা করলেন তাঁর গুরু বিশ্বাবসু য়েন শ্রী রাম চরণে ঠাঁই পায়।
কর্ণব মুনির শেষ ইচ্ছায় ভগবান অত্যন্ত প্রীত হয়ে বলেন, শ্রী কৃষ্ণ জন্মে কর্ণব ও তাঁর গুরু বিশ্বাবসু তাঁর শ্রী পদ্মে বিরাজ করবেন দুটি নূপুর হয়ে।
আর গুরু এবং শিষ্যের ভেদ বোঝাতে তার বাম চরণে ছোট ও ডান চরণের নূপুরটি বড় হবে।
সেই থেকেই শ্রী কৃষ্ণের দুটি চরণে আলাদা আলাদা মাপের নূপুর রূপে মুনি কর্ণব ও মুনি বিশ্বাবসু বিরাজ করেন।