এক তরতাজা প্রাণের আকস্মিক মৃত্যু আর সেই মৃত্যুর হাত ধরেই নবজীবন পেলেন অন্য তিন জন। শহরে ফের মরণোত্তর অঙ্গদানের নজির। একদিকে যখন যুবকের অপমৃত্যু ঘিরে শোকাচ্ছন্ন তাঁর গোটা পরিবার ঠিক সেই সময়েই সেই যুবকের সৌজন্যে যে তিনজন নতুন জীবন পেলেন তাঁদের পরিবারও যেন ভাষাহীন।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ মরণোত্তর অঙ্গদান নতুন কিছু নয় তবে মাঝে মাঝে এই অঙ্গদান এমন ভাবে হয় যাতে বারবার মনে হয় জীবন এত কেন অনিশ্চিত? কেন জীবন ফেলে চলে যেতে হয় তরতাজা প্রাণকে? আবার অন্যদিকে বলতে হয় সেই পরিবারের কথাও যারা আদরের ছেলেকে হারিয়ে ফেলেও শক্ত মনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মরণোত্তর অঙ্গদানের জন্য।
হাওড়ার আমতার নারিট গাজিপুর এলাকার বাসিন্দা বছর তেইশের পুষ্কর পাল নিজের জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে গেলেন আরও তিনটে প্রাণ। এলাকায় অত্যন্ত প্রাণচঞ্চল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন পুষ্কর। গত বৃহস্পতিবার, ২৯ মে রাতে দুই বন্ধুকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময়ে বাড়ির কাছাকাছিই এক ভয়াবহ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর। একটি লরিকে সাইড দিতে গিয়ে পিছলে যায় তাঁর বাইকের চাকা। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ধারে ছিটকে পড়েন তিনি, মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে পুষ্করের। তাঁর বন্ধু স্বদেশ পাল জানান, প্রথমে পুষ্করকে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার তেমন উন্নতি না দেখে সেখান থেকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রেফার করা হয়। ততক্ষণে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন কিন্তু ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসা শুরু করার পরেও জ্ঞান আর ফেরেনি তাঁর। শুক্রবারেই চিকিৎসকরা বুঝে যান, ক্রমেই ব্রেন ডেথের দিকে এগোচ্ছেন রোগী।
৩০ মে গভীর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয় যুবকের। স্বাভাবিক ভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর গোটা পরিবার। তবে সেই মুহূর্তেও পুষ্করের পরিবার যা করলেন, তা সহজ নয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ছেলের অঙ্গগুলি দান করবেন, যাতে পুষ্কর অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। জানা গিয়েছে, রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন রোটোর তত্ত্বাবধানে রবিবার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুষ্করের লিভার ও দুটি কিডনি তিনজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। তার কিডনি পেয়েছেন পিজি হাসপাতালের এক ৩৫ বছরের রোগী, এবং ৫২ বছরের আর এক রোগি তিনি আলিপুরের এক হাসপাতালে ভর্তি।। পিজিতেই ভর্তি এক রোগী, বয়স ৪৭, তাঁকে দেওয়া হয়েছে পুষ্করের লিভার। তবে জাতীয় অঙ্গ ও কোষকলা প্রতিস্থাপন সংস্থায় রোটোতে নথিভুক্ত করে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও গ্রহীতা মেলেনি বলে তার ফুসফুস ও হার্ট কাজে লাগানো যায়নি। পুষ্কর হয়ত তাঁর মা বাবার কাছে আর সশরীরে ফিরবেন না শুধু মা বাবা জানবেন ছেলে অন্য কারোর বেঁচে থাকার কারণ হয়ে আছে।