এই মুহূর্তে মানুষ সত্যি আর মানুষের জন্য নয়। মানুষ মানুষের কাছ থেকে আর কোন সহানুভূতি আশা করতে পারে না, এই কথাই ফের সত্যি বলে প্রমাণিত হল। তাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে এক অসুস্থ যাত্রী দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় পড়ে রইলেন
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: চরম অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে। ট্রেন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লেন এই বৃদ্ধ, দীর্ঘ সময় অবধি ওই অসুস্থ অবস্থাতেতেই পড়ে ছিলেন তিনি। কোন চিকিৎসা মেলেনি তাঁর। আর এই অবহেলার ফলে এক বড় ঘটনাও ঘটে যেতে পারত কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সেরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।
মঙ্গলবার পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধ। অথচ শুরু থেকেই বারংবার বলা হয়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যাত্রীদের সুরক্ষা ও আরামের জন্য নির্ধারিত প্রিমিয়াম ট্রেন, কিন্তু এরকম এক স্পেশাল ট্রেন হওয়া সত্ত্বেও সেই ট্রেনে কোনও মেডিক্যাল টিম ছিল না বলেই সহযাত্রীদের অভিযোগ। আর এর ফলেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে। অভিযোগ, রেল আধিকারিকেরাও দীর্ঘক্ষণ কোনও ব্যবস্থা নেননি।
চোখের সামনে এই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন এক ব্যক্তি। তিনি এবং বাকি প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ব্যক্তি ভুবনেশ্বরের কিছুটা আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আচমকা বুকে ব্যথা হয় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং তারপর ভুবনেশ্বর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য এসে পৌঁছায়নি। টিকিট পরীক্ষক বা অন্য কোনও রেলকর্মীও এগিয়ে আসেননি। যাত্রী ও স্থানীয় মানুষজনরা এগিয়ে এসে CPR দেওয়ার চেষ্টা করলেও ট্রেনে ছিল না কোনও স্ট্রেচার, ডাক্তার বা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ভিডিওতে দেখা যায়, সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন উপস্থিত যাত্রীরা, তবু কোথাও কোনও সাড়া নেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, এই ঘটনা যদি কোনও তারকার সঙ্গে ঘটত, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হত। সাধারণ যাত্রী বলেই এই গাফিলতি এই অবহেলা! তাঁদের আরও অভিযোগ, এই ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি রয়েছে। অনেকে এটাও বলছেন, এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হত।
ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর রেল পুলিশের এবং রেল আধিকারিকরা এসে অসুস্থ বৃদ্ধকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠান। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর শারীরিক অবস্থা জানা যায়নি। যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ডাক্তার নেই, স্ট্রেচার নেই, ছাউনি নেই — কিছুই এসে পৌঁছায়নি। এমনকি জরুরি মুহূর্তে যে সাহায্য দরকার ছিল, সেটুকুও মেলেনি। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার বড় উদাহরণ।”