রাজ্যের প্রায় একাধিক সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে গ্রুপ সি ও গ্রু ডি -র আসন শূন্য। ২০১৬ সালের এসএসসি-র পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ায় সেই সঙ্কট আরও বেড়েছে। গ্রুপ সি ও গ্রু ডি- র পাহাড় সমান কাজ কি করে হবে কার্যত মাথায় হাত প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল। যার ফলে বর্তমানে চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমত চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি বহাল রয়েছে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে স্কুলে যাচ্ছেন ও ক্লাস করাচ্ছেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট এও নির্দেশ দিয়েছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসএসসিকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তবে নতুন করে একই চাকরির জন্য পরীক্ষায় বসতে নারাজ চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা। এনিয়ে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত।
কিন্তু গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য যেহেতু কোনও নির্দেশই নেই শীর্ষ আদালত তাই তাঁরা আর স্কুলেও যেমন যাছেন না তেমন বেতনও পাচ্ছে না। অর্থাৎ প্যানেল বাতিলের ফলে সম্পূর্ণরূপে তারা চাকরি হারিয়েছেন। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীরা চাকরিহারা হওয়ায় তার প্রভাব ব্যাপক আকারে পড়েছে স্কুলগুলোতে। আগে থেকে রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মী সংখ্যার কম ছিল। পাশাপাশি ২০১৬ সালের এসএসসি-র পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ায় সেই সঙ্কট আরও বেড়েছে। গ্রুপ সি ও গ্রু ডি- র পাহাড় সমান কাজ কি করে হবে সেই চিন্তা করে, কার্যত মাথায় হাত প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের। শিক্ষাকর্মী না থাকায় তাঁদের সেই কাজ করতে হচ্ছে। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া থেকে বাড়তি আরও অনেক অফিসিয়াল কাজ তাঁদের করতে করতে হচ্ছে। নারানদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া-র বক্তব্য, “আমার বিদ্যালয়ে বর্তমানে একজন গ্রুপ ডি (শারীরিক প্রতিবন্ধী) ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটেন। বিদ্যালয় ইন্টিগ্রেটেড। ক্লাস ১থেকে ১২। ছাত্র সংখ্যা ১৩৩৫। একজন প্রধান শিক্ষক ।তিনটি (১টি চাকরি হারা) গ্রুপ ডি খালি।ক্লাক ২( ১টি খালি)। ফলে প্রতিদিন সমস্যা। এরা ছুটি নিলে, গ্রুপ সি,ডি, সব কাজ বিদ্যালয়ের প্রধান কে ( যেহেতু তার ছুটি নেওয়া বা কাজের নির্দিষ্ট সময় নেই)করতে হয়। বিদ্যালয়ে অবিলম্বে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগের চেয়ে, গ্রুপ সি,ডি কর্মী নিয়োগ অথবা সারপ্লাস থেকে নিয়োগ খুব জরুরী।” বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য,
“২০১৬সালে এস এস সি দ্বারা নিযুক্ত সব শিক্ষাকর্মীদের চাকরি গেছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সরকারের দুর্নীতির কারণেই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হলো আমাদের রাজ্যে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো গ্রামবাংলার স্কুলগুলো। বহু স্কুল গ্রুপ সি কর্মী শূন্য বা গ্ৰুপ ডি শূন্য হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষকদের পক্ষে স্কুল চালানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র এই সরকার।”
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের মতো চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকাশভবন অভিযানে সামিল হন তাঁরা। স্ব-সম্মানে,স্ব-বেতনে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এদিন বিকাশভবন অভিযান করেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হওয়ায় আজ তাঁরা চাকরিহারা। গত ২ মাস ধরে বেতনও পাচ্ছেন না। তাই শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিকাশ ভবন অভিযানের সামিল হন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। সরকার শিক্ষাকর্মীদের দিকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীদে যথাক্রমে ২৫ হাজার ও ২০ হাজার করে মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু সে ভাতাও পাননি বলেই জানিয়েছেন যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। তবে তাঁদের দাবি, তাঁরা ভাতা নয় চাকরি ফেরত চান। এই দাবিতে আন্দোলনের সুর চড়ছে তাঁদেরও। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারীর বক্তব্য, “বিদ্যালয়ের অপরিহার্য অঙ্গ গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী। বিদ্যালয়ের গেট খোলে এবং বন্ধ হয় গ্রুপ ডি কর্মীর হাত দিয়ে। বর্তমানে গ্রুপ সি কর্মীর দায়িত্বও কম নয়। তাঁদের বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ে চলতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা কোনো প্রামাণ্য অভিযোগ ছাড়া বৈধভাবে নিযুক্ত কোন শিক্ষক শিক্ষাকর্মীকে বাতিল করার বিরুদ্ধে আমরা। আমাদের দাবি, নতুন করে পরীক্ষা নয়, ওএমআর কপি প্রকাশের মধ্য দিয়ে রি-প্যানেল করে অযোগ্যদের বাতিল করে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী এবং বঞ্চিত যোগ্য ওয়েটিংদের নিয়োগ দিয়ে এই প্যানেল বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকার সর্বতোভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করুক।”