বছর দুয়েক আগে মাকে হারিয়েছেন। নিজে বিয়ে করেননি। জীবনে পিছুটান বলতে কেবল ছিলেন অশীতিপর বাবা। বাবাকে কথা দিয়েছিলেন আর অল্প কিছুদিন, তারপর থেকে বাবার সঙ্গেই থাকবেন। কিন্তু বাবাকে কথা দিয়েও আর সেই কথা রাখা হল না অভিশপ্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানের পাইলট সুমিত সভরওয়ালের।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ একাই ৮,২০০ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল ক্যাপ্টেন সুমিত সভরওয়ালের। আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের এই রাস্তা হয়ত তাঁর কাছে কিছুই ছিল না। কিন্ত ভাগ্যের পরিহাস কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোন কারণের সামনে নতিস্বীকার করতেই হল এত অভিজ্ঞ এক পাইলটকে।
ঘটনার সময় এটিসিকে মে ডে কল করে জানিয়েছিলেন নো থ্রাস্ট নো লিফট, যতক্ষণে এটিসির থেকে উত্তর এসেছে তিনি অগ্নিকুন্ডে মিশে গেছেন, খাক হয়ে গেছেন আর হয়ত ঠিক সেই মুহূর্তেই তাঁর বাবা অপেক্ষা করছেন ছেলের ফোনের। ছেলে তো তাঁকে জানিয়েছিল লন্ডন পৌঁছে ফোন করবে। ফোন এসেছিল তবে ছেলের নয়, কোন এক ফোন সুমিতের বাবাকে জানান দিয়েছিল ছেলে আর ফিরবে না। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই বাবা ছেলের একসঙ্গে থাকার স্বপ্নটাও মরে গেছে।
সুমিত ছিলেন একজন যথেষ্ট অভিজ্ঞ পাইলট। বাবা ছিলেন ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-র প্রাক্তন আধিকারিক, এখন বয়স ৯০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে তাই বাবাকে সময় দিতে ভেবেছিলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন, সুমিত সেই কথা বাবাকে জানিয়েওছিলেন। বাবার জন্য খুব চিন্তা করতেন সুমিত। যখনই বাইরে যেতেন, পাড়ার প্রতিবেশীদের বলে যেতেন বাবার খেয়াল রাখতে। স্ত্রীকে হারিয়েছেন বৃদ্ধ, আঁকড়ে ধরেছিলেন ছেলেকেই, আর সেই সন্তানের মৃত্যুর খবরে সুমিতের বাবা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলের বলা কথাগুলো বারবার ঘুরেফিরে আসছে স্মৃতিতে আর ততবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা। শোকস্তব্ধ সুমিতের বোন-সহ বাড়ির অন্য সদস্যরাও। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ে সুমিতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন শিবসেনা বিধায়ক দিলীপ লান্ডে।
ডিজিসিএর রিপোর্ট অনুযায়ী, উড়ানের সময় মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতা থেকে প্রতি মিনিটে ৪৭৫ ফুট হারে নিচে নামতে শুরু করে বিমানটি। পাইলটদের হাতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ছিল মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়। জানা গিয়েছে, উড়ানের সামান্য সময়ের মধ্যেই বিমানটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। জীবনের বাকি কটা দিন চেয়েছিলেন ছেলের সঙ্গে কাটাবেন। কিন্তু সেই ছেলেই ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। আগেই হাত ছেড়েছেন স্ত্রীও। দুই প্রিয় মানুষের স্মৃতির ভার বহন করতে পারবেন তো এক অসহায় বৃদ্ধ?