ইম্ফলের ডিএম কলেজে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে এয়ার হোস্টেস হওয়ার প্রশিক্ষণ। তারপরই ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে সরাসরি চাকরি এবং নিয়োগ। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন কপালে টিকল না। মাত্র ২১ বছরেই ঝড়ে গেল তরতাজা প্রাণ। মণিপুরের থৌবাল শহরের বাসিন্দা ২১ বছর বয়সী নাগান্থোই শর্মা কংব্রাইলাতপাম। ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়া বিমান বিপর্যয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
মাম্পি রায়, সাংবাদিক- অভিশপ্ত বিমানের ডিউটিতে থাকা কেবিন ক্রুদের মধ্যেই একজন ছিলেন নাগান্থোই। দুর্ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাগান্থোই তাঁর দিদিকে ফোন করে জানান, তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন। ১৫ জুন ফিরে আসার পর যোগাযোগ করবেন পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু আর মেয়ের ফিরে আসা হল না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন নাগান্থোইর বাবা নন্দেশ কুমার শর্মা।
চোখের জল বাধ মানছে না। অ্যালবামের পাতা উল্টে মেয়ের স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছেন নাগান্থোইর পরিবারের সদস্যরা। নাগান্থোইর বাবা বলেন, শেষবার মেয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে বাড়িতে এসেছিল। ওই সময়ে আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম, তখন সে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে দেখা করতে এসেছিল। কয়েকদিনের ছুটি পেলেই সারপ্রাইজ দিতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসত।
আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে টেক অফের কিছুক্ষণ পরই লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ভেঙে পড়ে৷ দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মেয়ের মৃত্যুর আশঙ্কা গ্রাস করে নাগান্থোইর পরিবারকে। মণিপুর সরকারকে জানানোর পর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়৷ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বিমান।
আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিমানটি টেক অফের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়ে বিজে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উপর। সঙ্গে সঙ্গেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে বিমানটি। বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ১ জন ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। মৃতদের মধ্যে অন্যতম নাগান্থোইর বাড়ির সদস্যরাও শোকগ্রস্ত। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, কাজের সূত্রে প্রায়ই এদিক ওদিক ঘোরা হত নাগান্থোইর। এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ পেয়ে মুম্বইতে কয়েকজন মহিলার সঙ্গে থাকতেন নাগান্থোই। ঘরের মেয়েকে এতদূর কাজ করতে দিতে চাননি বাবা। ভেবেছিলেন পরবর্তীকালে রাজ্যের মধ্যেই কোনও স্থায়ী কাজ খুঁজে নেবে মেয়ে। কিন্তু তার আগেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অনেক দূরে পাড়ি দিল সে। যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়।