ওয়েব ডেস্ক : ইরাক ও সিরিয়ায় হেজবোল্লা ব্রিগেড বা কাতাইব হেজবোল্লা শিবিরের ওপর বিমান আক্রমণ চালিয়েছে আমেরিকার সেনাবাহিনী। শুক্রবার ইরাকি মিলিটারি বেসে রকেট আক্রমণ চালায় হেজবোল্লা ব্রিগেড। তিরিশ বারেরও বেশি সেই রকেট আক্রমণে এক আমেরিকান কনট্রাক্টর নিহত হন, চার জন প্রতিরক্ষা কর্মী জখম হন। এর জবাবে রবিবার ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তে হেজবোল্লা ব্রিগেডের হেডকোয়ার্টার্সে বিমান হামলা চালায় আমেরিকার সেনাবাহিনী। দুঃখের বিষয়, যেদিন সুদূর পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার সেনাবাহিনী বিমান অভিযান চালাল সেদিনই খোদ আমেরিকার বুকে নিউ ইয়র্কে ইহুদি পরব হানুক্কা পালনের সময় ইহুদি রাব্বির বাড়িতে আততায়ী হামলা করল। পাঁচজনকে সে ছুরি মারল। এর আগে, নভেম্বর মাসে নিউ জার্সিতে একটি ইহুদি মাংসের দোকান বা কোশার মিট শপে হামলা হয়েছিল। ২০১৯ সালে আমেরিকার মতো দেশে যে সাধারণ ইহুদি নাগরিকদের ওপর এ রকম জিউয়িশ পোগ্রোম টাইপের হামলা হতে পারে, তা ভাবতে কষ্ট হয়।
যারা নিজেদের দেশে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, অথচ অটুট সুরক্ষার গর্ব করে, তাদের মতো মূর্খ আর হয় না। বিমানবাহী বড় বড় রণপোত থেকে বাইরের দেশে হামলা চালিয়ে লাভ কী? আমেরিকায় এখন সব চাইতে বেশি উৎপীড়নের শিকার ইহুদিরা। তার পর মুসলিমরা। তার পর অন্যান্য ধর্ম কিংবা জাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। কিছু দিন আগেই এ ব্যাপারে আমেরিকায় একটি সমীক্ষা হয়। তাতেই এই রিপোর্ট উঠে আসে।
কট্টর শিয়াপন্থী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হেজবোল্লা ব্রিগেডের প্রধান কমান্ডার এখন জামাল জাফর মোহাম্মদ আলি ইব্রাহিমি। হেজবোল্লা অনুগামীদের কাছে সে এক ফাদার ফিগার। অনেক যাত্রা-সিনেমার আর্টিস্টদের মতো এই সন্ত্রাসবাদীরাও পিতৃদত্ত নাম সাধারণত বহন করে না। তাই আলি ইব্রাহিমি-র পরিচিতি এখন আবু মাহদি আল-মুহানদিস নামে। আলি ইব্রাহিমি-র জন্ম হয়েছিল ইরাকের বসরায়। সাদ্দাম হুসেনের জমানায় ইরান-ইরাক যুদ্ধ বাধলে সে আয়াতোল্লা খোমেইনির ইরানে পালিয়ে যায়। সেখানে সেই পলাতক শিয়াপন্থী ইরাকিদের তালিম দেওয়ার জন্য ইরানের রিপাবলিকান গার্ডরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির খোলে। আল-মুহানদিসের বাহিনী খোমেইনিপন্থী ইরানি রিপাবলিকান গার্ডদের পঞ্চম বাহিনী হিসাবে সন্ত্রাসে নামে।
ওই যুদ্ধের সময় যেসব দেশ সাদ্দাম হুসেনকে সমর্থন করেছিল, আরব দুনিয়ায় সেইসব দেশের এমব্যাসিতে বোমা বিস্ফোরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আল-মুহানদিস-কে। সেইমতো ১৯৮৩ সালে কুয়েতের ফরাসি ও মার্কিন এমব্যাসিতে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনার জন্য কুয়েতি আদালতে আল-মুহানদিস ফেরার হিসাবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। ইরানে থাকার সময় আল-মুহানদিস এক ইরানি রমণীকে বিয়ে করে। সাদ্দাম হুসেনের পতনের পর কাতাইব হেজবোল্লার কমান্ডার হিসাবে সে যেমন একদিকে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, ঠিক তেমনই আমেরিকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইরাকি সেনাবাহিনীও ছিল তার সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের টার্গেট। অন্যদিকে, ইরানের ধারাবাহিক মদতে সিরিয়ার মাটিরও দখল নিয়েছে এই কাতাইব হেজবোল্লা। সেখানে প্রথমে তাদের লড়াইটা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ দামাস্কাসের বিরুদ্ধে। হাফিজ আল-আসাদের ছেলে বাশর আল-আসাদের বিরুদ্ধে। যদিও তাদের প্রাইম টার্গেট ইজরায়েল। কাতাইব হেজবোল্লা-র ফিদায়েঁ আর ঘাতকেরা বর্তমান ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের নামে শপথ নেয়।
আমেরিকার প্রশাসন বাইরের পৃথিবীকে তার সামরিক শক্তি দেখাতে ব্যস্ত। এও এক ধরনের শো বিজনেস। অথচ আমেরিকার মাটিতে, একেবারে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ক্রিসমাস ও নববর্ষের প্রারম্ভিক আনন্দৎসব চলার সময় ছুরিকাহত হলেন এক ইহুদি রাব্বির পরিবার। রাব্বি হলেন ইহুদি আইনের শিক্ষাদাতা। এ বছর ২২ ডিসেম্বরের সূর্যাস্ত থেকে ৩০ ডিসেম্বরের রাত পর্যন্ত ইহুদিদের হানুক্কা পরব পালনের সময় পড়েছে। নিউ ইয়র্কে ওই হতভাগ্য রাব্বির বাড়িতেও এই পরবের আয়োজন হয়েছিল। হানুক্কা-কে ইহুদিরা বলে আলোর উৎসব। সেলিউসিড সাম্রাজ্যের অধীনে যখন জেরুজালেম, তখন ইহুদি গেরিলা নেতা ম্যাকাবি-র নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়। সেই সময় জেরুজালেমের টেম্পলের জন্য নতুন করে শপথ নেন ইহুদি বিদ্রোহীরা। এরই স্মরণে প্রতি বছর হানুক্কা পালন করা হয়। কিন্তু অটুট নিরাপত্তার দেশ বলে কথিত আমেরিকাতেই নিউ ইয়র্কের মতো শহরে যদি ইহুদি রাব্বির পরিবার নিরাপত্তা না পায়, তাহলে বাদবাকি পৃথিবীর কোথায় ইহুদিরা পাবে? গত মাসে নিউ ইয়র্কের আর এক পারে নিউ জার্সিতে একটি ইহুদি মাংসের দোকানে হামলা হল। ট্রাম্প প্রশাসন ঠিক কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে? অথচ তারা তেল আভিভের বদলে জেরুজালেমে ইজরায়েলের নতুন রাজধানী গড়তে চাইছে।