ওয়েব ডেস্ক : এই প্রথম ফাইটার ‘তেজস’ নামল বিমানবাহী রণপোতে। লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট ‘তেজস’ বানিয়েছেন ভারতেরই প্রযুক্তিবিদরা। ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে জাহাজের রানওয়েতে অবতরণের উপযুক্ত সংস্করণও বানানো হয়েছে। সমুদ্রের উপর ভাসমান জাহাজের রানওয়েতে ‘তেজস’ ঠিকমতো নামতে পারে কি না, সেটাই প্রযুক্তিবিদদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ‘তেজসে’র পাইলট সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। নির্ঝঞ্ঝাটে বিমানবাহী রণপোত ‘আইএনএস বিক্রমাদিত্য’র ডেকে নেমেছে ‘তেজস’। ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইতিহাসে এটা একটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
‘তেজস’-এর এই নৌ-সংস্করণটির পাইলট ছিলেন কমোডর জয়দীপ মওলঙ্কর। যেহেতু, বিমানবাহী রণতরীর রানওয়ে বেশি লম্বা নয়, তাই তাতে নামার সময় তাঁকে অ্যারেস্টর ওয়্যার ব্যবহার করতে হয়েছিল। শনিবার বেলা দশটার সময় এই উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তার আগে গোয়ার উপকূলের এয়ারবেসে কমোডর জয়দীপ বেশ কিছু দিন ট্রায়াল দিয়েছিলেন।
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ডিআরডিও) এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই প্রথম ডিআরডিও-র ডিজাইনে তৈরি এবং ধাপে ধাপে উন্নত করে তোলা কোনও ফাইটার বিমান ভারতীয় কোনও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে নামল। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) কর্তা আর মাধবন বলেছেন, ‘তেজসে’র ল্যান্ডিং গিয়ার, অ্যারেস্টর হুক এবং সাপোর্ট স্টাফ কনট্রোলিং সিস্টেম তৈরিতে হ্যালেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ‘তেজসে’র এই সাফল্যের পিছনে নেভি, উপকূল-নির্ভর পরীক্ষা কেন্দ্র-র (শোর-বেসড ট্রায়াল ফেসিলিটি বা এসবিটিএফ) পাশাপাশি হ্যালের অবদানও কম নয়।
আরও পড়ুন : গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষায় বিশেষ ডুবুরি বাহিনী
ডিআরডিও-র নতুন চ্যালেঞ্জ হল, যত দ্রুত সম্ভব আরও বেশি সংখ্যায় ‘তেজসে’র এ রকম নৌ সংস্করণ নির্মাণ। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ‘আইএনএস বিক্রমদিত্য’-র ওজন ৪০ হাজার ৪০০ টন। ৪০ হাজার টন ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-কে সময়োপযোগী করে তোলা হচ্ছে। দুটি বিমানবাহী রণতরীরই ফাইটার ‘তেজসে’র নৌ সংস্করণ দরকার। এখন ‘আইএনএস বিক্রমাদিত্য’-র ভরসা বলতে রাশিয়ার বানানো ৪৫টি মিগ ২৯-কে ফাইটার। ২০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ ১৪ হাজার ১৯৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় এই এয়ারক্রাফটগুলি রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছিল।
এর আগে, ভারতের নৌবাহিনী সিঙ্গল ইঞ্জিনের ‘তেজস’কে তাদের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে তুলতে চায়নি। তখন তাদের মত ছিল, ‘তেজস’ খুব ভারী। বিমানবাহী রণপোতের রানওয়ে থেকে তার ওড়া সম্ভব নয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা বলেছিলেন, মিসাইলে সজ্জিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাঙ্ক ভরে জ্বালানি নিলে ‘তেজস’ আর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ছোট রানওয়ে থেকে উড়তে পারবে না। ‘তেজস’ নির্মাতারা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই শেষ হাসি হাসলেন।