Date : 2024-04-26

আড়াই ঘন্টা ধরে আত্মহত্যা হুমকি – ৮তলা থেকে লাফ আইএনকে’র রোগীর, ব্যর্থ পুলিশ-দমকল!

সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিকঃ মল্লিক বাজার ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে রোগীর আত্মহত্যার চেষ্টাকে ঘিরে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা। প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় পেলেও তাকে সুস্থ ভাবে নামাতে পারল না দমকল পুলিশ কেউই। শেষ অবধি চোখের সামনে ৮তলা থেকে পড়ে গেলেন তিনি এই মুহুর্তে সংকটজনক অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ওই রোগী সুজিত অধিকারী।

জানা যায় , হাসপাতালের আট তলায় একটি জানলা দিয়ে কার্নিশে উঠে পড়েন ওই রোগী। দেখা মাত্রই খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনীকে। আসে পুলিশ আনা হয়েছে হাইড্রলিক ল্যাডার। এই কাণ্ড দেখতে মল্লিকবাজার মোড়ে ভিড় করেন প্রচুর মানুষ। যার জেরে ওই এলাকায় যানজট তৈরি হয়। 

কোনভাবেই তার কাছে পৌঁছনো যাচ্ছিল না। ল্যাডার নিয়ে কাছে গেলেই লাফ দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন তিনি। একসময় এমন ভাবে কার্নিশের ধারে চলে আসছিলেন মনে করা হচ্ছিল যে কোন মুহুর্তে বড় বিপদ ঘটে যাবে। আর ঠিক তাই হল। একেবারে শেষ মুহূর্তে যখন তার জন্য জাল নিয়ে আসা হল সেই সময়ে কার্নিশ থেকে ঝুলে পড়েন তিনি। আর তার পরক্ষণেই হাত পিছলে যায় তার। ধাক্কা খেতে খেতে রক্তাক্ত অবস্থায় নীচে পড়ে যান তিনি৷

এই ঘটনা যেন বাকরুদ্ধ করে দিল শহর কলকাতাকে। এই ঘটনার পরই নার্সিংহোমে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। কেন নিচে জালের বন্দোবস্ত না করে ম্যাট পাতা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও উঠেছে অভিযোগের আঙুল। যে ওয়ার্ড লাগোয়া কার্নিশে উঠে পড়েছিলেন রোগী, সেই জানলায় কেন গ্রিল ছিল না সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে সুজিতের অত্যধিক মাদকাসক্তি ছিল। শনিবার সকালে নার্সিং স্টাফ তাকে কার্নিশে যেতে দেখেন। বাধাও দেন। তিনি ওই নার্সিং স্টাফের হাতে কামড় দিয়ে কার্নিশে উঠে পড়েন। আর ঠিক এই সূত্র ধরে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে জানলা খুলতে পারলেন ওই রোগী? সিইওর দাবি, স্ক্রু দিয়ে জানলা আটকানো ছিল। ওই স্ক্রু কোনওভাবে খোলেন। ভেঙে যাওয়া অংশও খুঁজে পায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কোনও যন্ত্রের সাহায্য রোগী নিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

কিন্তু কেন এত সময় ধরে কার্নিশেই ছিলেন তিনি? আজ তো তার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার দিন ছিল আর সেদিনই এমন একটা কাণ্ড ঘটালেন সুজিত? মানসিক অবসাদ নাকি আত্মহত্যার ছক? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসছে। জানা যাচ্ছে, মাত্র ২২ দিন আগেই স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন তিনি। তার ব্লাড ক্যানসার হয়েছিল। স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে শোক, অবসাদে আচ্ছন্ন হন সুজিত। তার জন্যই এই ঘটনা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে এই ঘটনা যে অত্যন্ত লজ্জার অত্যন্ত দুঃখজনক তা বলাই বাহুল্য।