Date : 2024-04-26

জানেন কী? অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে হিন্দু ধর্মের সূচনা হয়েছিল

ওয়েব ডেস্ক: অক্ষয় অর্থাৎ যা কোন ক্ষয় প্রাপ্ত হয় না। হিন্দু পুরাণ ও ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুসারে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিটির সঙ্গে বহু শুভ কাজ জড়িয়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাস এই দিনে যা কিছু অর্জন করা যায় তা অক্ষয় হয়।

পৃথিবীর কোন কিছুই স্থায়ী নয় এমনকি মানুষের জীবনও স্থায়ী নয়, তবে অক্ষয় তৃতীয়াকে ঘিরে মানুষের বিশ্বাস এই দিনে যে কাজ শুরু করা যায় তা অবশ্যই সফল হয়। মৎস পুরাণে বর্ণিত আছে ভগবান শ্রীবিষ্ণু এই তিথিতে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন।

প্রথম খাদ্য শস্য স্বরূপ যবের রোপন তিনি নিজের হাতেই করেছিলেন। এই তিথিতে যজ্ঞাহুতিতে তাই ঘৃত মিশ্রিত যব ও কালো তিলের আহুতি দেওয়ার প্রচলন আছে। শুধু জীব সৃষ্টি নয়, পদ্ম পুরাণ অনুসারে এই দিনে হিন্দু ধর্মের রচনা হয়।

বিষ্ণু পুরাণে বর্ণিত আছে এই দিনে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার শ্রী পরশুরামের জন্ম হয়। এই দিনেই নাকি মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত রচনা শুরু করেন।

অক্ষয় তৃতীয়া বৈষ্ণবদের মধ্যে অত্যন্ত পবিত্র তিথি বলে গণ্য হয়। এই দিনে শ্রী কৃষ্ণের চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় যা ২১ দিন ধরে চলে।

চন্দন যাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে উৎকলখন্ডে বর্ণিত আছে, বৈশাখ মাসে অসহ্য তাপ প্রবাহ সহ্য করতে না পেরে শ্রী জগন্নাথদেব রাজা ইন্দ্রদ্যুন্মকে স্বপ্নাদেশ করে বলেন, তাপ জ্বালায় তাঁর গাত্র দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে আমার সারা অঙ্গকে শীতল করার ব্যবস্থা করো। রাজা স্বপ্নাদেশ অনুসারে জগন্নাথদেবের সারা শরীর শীতল চন্দন লেপন করে আবৃত করার নির্দেশ দেন।

শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে বর্ণিত আছে, পরম বৈষ্ণব ভক্ত শ্রী মাধবেন্দ্রকে তার আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন। মলয় প্রদেশ থেকে সুগন্ধি চন্দন এনে তাকে অর্পন করতে। মাধবেন্দ্র মলয় প্রদেশের চন্দনের সন্ধানে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এসে কর্পুর ও চন্দন নিয়ে ফের বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিলেন। শ্রী মাধবেন্দ্র যখন বৃন্দাবনে ফিরে আসছিলেন পথে তিনি গোপীনাথ মন্দিরে বিশ্রামের জন্য এক রাত্রিকাল যাপনের মনস্থির করেন।

গোপীনাথ মন্দিরে ফের মাধবেন্দ্রকে শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, তার অঙ্গ তীব্র দহনে জ্বলে যাচ্ছে, মাধবেন্দ্র যেন গোপীনাথের শ্রী বিগ্রহকে যেন ওই চন্দন আর কর্পুর দ্বারা চর্চিত করেন। এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে এই চন্দন যাত্রার সূচনা হয় এবং পুরী মন্দিরে শ্রী জগন্নাথদেবকে চন্দনে চর্চিত করা হয়। জীব জগৎ-এর সর্ব সুখ ও সমৃদ্ধি প্রাপ্তি হয় এই দিনে।