Date : 2024-04-26

অসহায়, অবহেলিত মানুষদের বেঁচে থাকার পথ দেখাচ্ছেন তরুণ শিক্ষক অসীম রায় চৌধুরী

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক ঃ অনেকে বলেন, মানেন- বাবা মা ঈশ্বরের সমতুল। সেই ঈশ্বরকেও পদে পদে অবহেলিত, লাঞ্চিত হতে দেখা যায়। বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন থাকা সত্ত্বেও তারা নিঃসঙ্গ, অসহায়। কখনও ফুটপাতে, কখনও বাসস্ট্যান্ডে অবাঞ্ছিত জীবনযাপন তাদের। বৃদ্ধাশ্রমগুলি গড়ে তোলা হয়েছে এই সব অসহায় অবহেলিত মানুষদের কথা ভেবেই। কেষ্টপুরের জাগরণী বৃদ্ধাশ্রম। এখানকার আবাসিকরা পরিবারের মত। অতীত জীবনের অসহায়তা থেকে এখানে বেশ ভাল আছেন ওঁরা।

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ? সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত এই গান এক চিরন্তন সত্য। তারই নিদর্শন দেখতে পাওয়া গেল কেষ্টপুরের জাগরণী বৃদ্ধাশ্রমে। জাগরণী বৃদ্ধাশ্রমে যারা রয়েছেন তারা একটা পরিবারের মত। সেখানে যারা পরিচর্চায় রয়েছেন তারা সকলেই ছাত্র-ছাত্রী। এবং এই পরিবারের প্রাণপূরুষ হলেন অসীম রায় চৌধুরী। পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার বাইরে তাঁর একটা জগত্ আছে। সেই জগত হল জাগরণী বৃদ্ধাশ্রমকে ঘিরেই। তাতে থাকা আবাসিকরায় তার পরিবার। ২০১৬ সালে জাগরণীর পথচলা শুরু হয়েছিল তিনজন আবাসিককে নিয়ে। এখন এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাতজন। এই সাতজন প্রৌঢ়ার মধ্যে কাউকে দক্ষিণনেশ্বরের ব্রিজের তলা থেকে তুলে আনা হয়েছে। কেউ আবার হাওড়ার ফুটপাতে পড়েছিলেন। কাউকে আবার লেকটাউনের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এই অবলম্বনহীন বৃদ্ধাদের এনে জাগরণীর আশ্রয়ে আনা হয়েছে। ছোটবেলায় যখন রাস্তায় এই সব মানুষদের পড়ে থাকতে দেখতেন তখন কষ্ট হত অসীমবাবুর। অসহায় মানুষগুলোর জন্য তিনি জাগরণী গঠন করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আবাসিকদের নিয়ম মতো খাওয়াদাওয়া, হাঁটা, বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন লুডো খেলা থেকে টিভি দেখা এবং পুঁতি দিয়ে মালা করা সবেতেই তাদের ব্যস্ত করে রাখা হয়। অসীমবাবু একা নন, এই কাজে অসীমবাবুর সঙ্গে তার ছাত্রছাত্রীরাও কাঁধেকাঁধ রেখে অংশ নিয়েছেন।

বিনা বারুল, পদ্মা রানি রায়, অর্চনা রায়, মাধবী বন্দ্যোপাধ্যায় যারা এখন জাগরণির আবাসিক, তাদের অতীতকালের অবস্থার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার পার্থক্য আকাশপাতাল। তারা এখন ভালো আছেন। কেউ গান গাইতে, কেউ আবার কবিতায় পারদর্শি। গান গেয়েও শোনালেন অর্চনা রায়।

ব্যস্ত সবাই। রুলটানা জীবনে অন্যদের নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই। তবুও সমাজে অসীমবাবুর মত কেউ কেউ আছেন যারা ভাবেন সমাজের কথা। অন্যদের অসহায়তার কথা। পেশাগত জীবনের হাজার ঝক্কি সামলেও তাঁরা অপরাজিত।