Date : 2024-05-02

চিঠির দুনিয়া ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পাড়ি দিলেন সম্রাট

সায়ান্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : চেনা ঠিকানায় চিঠি আর আসবে না। কারণ চিঠির অধিকারী পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। বিশিষ্ট গজল গায়ক পঙ্কজ উদাসের প্রয়াণ যে ভারতীয় সংগীত জগতের এক বড় ইন্দ্রপতন তা বলাই যায়। তিনি হয়তো আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই তবু থেকে গেল তার অনবদ্য কিছু গান আর কিছু ঘটনা যার জন্য মানুষের মনে তার জায়গা অবিস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে।

পঙ্কজরা তিন ভাই। ছেলেদের মধ্যে সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাদের বাবা ভর্তি করে দেন রাজকোটের সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন পঙ্কজই। বড় ভাই মনোহর উদাস ছিলেন অগণিত হিন্দি ছবির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী। পঙ্কজের চেয়ে বড় নির্মল উদাস গজল গায়ক হিসেবে বিখ্যাত হন। তবে পরবর্তীকালে খ্যাতির দিক দিয়ে বড় দুই দাদাকে ছাপিয়ে যান পঙ্কজ।

তার প্রথম এলবামের নাম ছিও আহাট আর সময়ের সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন গজল সংগীতের সমার্থক। বলিউডে সঞ্জয় দত্তের নাম ছবির জন্য বিখ্যাত চিঠি আয়ি হ্যায় গানটি গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠেন এই গানে চোখ ভিজেছিল আপামর সংগীতপ্রেমীর।

বিশ্বে শান্তি আনতে গানের থেকে দামি অস্ত্র আর কিই বা হতে পারে আর মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি সেই অস্ত্র নিজের হাতে তুলে নেন। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের আবহে দাদার এক অনুষ্ঠানে প্রথমবার গান গাওয়ার সুযোগ পান পঙ্কজ। তিনি সেফিন গেয়ে ছিলেন লতা মঙ্গেশকরের অ্যায় মেরে বতন কে লোগো যে গান কিনা চিন-ভারত যুদ্ধে নিহত শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতেই তৈরি করেছিলেন কবি প্রদীপ এবং সঙ্গীত পরিচালক সি রামাচন্দ্র। সেই গান বছর তার কণ্ঠে শুনে মুগ্ধ হন উপস্থিত শ্রোতারা। তারা ৫১ টাকা পুরস্কার তুলে দেন সেদিনের শিশুশিল্পী পঙ্কজের হাতে। সেই যে গানের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি আমৃত্যু তিনি তার রাস্তা বদলাননি

হিন্দি সিনেমা হোক বা ইন্ডি-পপের দুনিয়া তার অবদান অনস্বীকার্য। লাইভ অনুষ্ঠান হোক বা অ্যালবাম কিংবা সিনেমা, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। চান্দি জ্যায়সা রং, না কজরে কি ধার, জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে, ‘আহিস্তা’র মতো গানে মন জয় করেছিলেন পঙ্কজ। এছাড়াও পঙ্কজের গাওয়া ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’এর মতো এলবামের মধ্যে দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন পঙ্কজ উদাস।আজীবন তিনি তার দক্ষতার ছাপ রেখে গিয়েছেন বারবার। আসলে গজলের মতো গানকে রুপোলি পর্দায় নিয়ে আসার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম পঙ্কজ।

২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়েছে তার। তার মৃত্যুতে পরিবারের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে এক শোকবার্তা। তাতে লেখা, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, পদ্মশ্রী পঙ্কজ উদাস মারা গিয়েছেন। দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। চলছিল চিকিৎসা। যদিও শেষরক্ষা হল না।