Date : 2024-04-26

“লোকের অভাব অভিযোগ শোনাই কাজ জনপ্রতিনিধিদের।”- ফিরহাদ হাকিম

সঞ্জু সুর, রিপোর্টার : তিনি মন্ত্রী ! একদমই না। তিনি নেতা ! নাহ্, তাও একদম নয়। তিনি কি হোমড়াচোমড়া কেউকেটা কেউ একজন। কোনোমতেই নয়। তাহলে তাঁর পরিচয় কি, যাকে হাতের কাছে পেলেই এলাকার মানুষজন আব্দার থেকে অভিমান, সব এক নিঃশ্বাসে করে ফেলে। তিনি ফিরহাদ হাকিম। এলাকার মানুষজন অবশ্য তাঁকে “ববি” নামেই বেশি চেনে। তাই ববি যেখানে, আব্দার অভিমান ও সেখানে। শনিবারের সকালে যে ছবি আরো একবার দেখা গেল চেতলা হাটের অলিতে গলিতে ।

উপলক্ষ্য ছিলো ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। শনিবার সকাল ন’টার সময় কলকাতা পুরসভার ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের রাখাল দাস আড্য লেনে, পায়ে হেঁটে ঢুকে পড়লেন এ বাড়ি সে বাড়ির অন্দরে। এলাকার প্রায় প্রতিটা বাড়ির মানুষকে নামে নামে চেনেন ববি হাকিম। “বাবলু দা, ভোট কিন্তু এবার দিদির জন্য,” “কি, ৩০ তারিখ কিন্তু দূর্গাকেই ভোট দিতে হবে,” “বৌদি, ভবানীপুর ঘরের মেয়েকেই চায় তো!” “তুমি অঞ্জন দার ছেলে তো! বাবা কেমন আছেন! ৩০ তারিখ মনে থাকে যেন,” এভাবেই চলছিলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে ভোটের প্রচার। তবে পাড়ার ছেলেকে হাতের কাছে পেয়ে অনেকেই তাদের অভাব অভিযোগ ও জানাচ্ছিলেন।

আসলে পাড়ার ছেলে যে একাধারে রাজ্যের মন্ত্রী অন্যদিকে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান। ফলে নিজেদের দাবি তো তাকে জানানোই যায়। একজন মহিলা বেশ অনুযোগের সুরেই বললেন,” ববি দা, এই গলির ভিতর টা রাতের দিকে পুরো অন্ধকার হয়ে থাকে। এবার কিন্তু এটা তোমাকে দেখতেই হবে।” ববি হাকিম তখনই দলের নেতা মলয় কে বলে দিলেন ভোটের পর যেন এখানে লাইটের ব্যবস্থা করা হয়। রাখাল দাস আঢ্য লেনেই বাড়ি ইলা সাহার। স্বামী মারা গিয়েছেন। ২২ বছরের ছেলে সৌম্যজিৎ গ্রাজুয়েট। পাশ করে বাড়িতে বসে আছে। ববিদার কাছে ইলা দেবীর অনুরোধ ছেলের জন্য যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। ইলা দেবীকে আশ্বস্ত করে ববি এগিয়ে চললেন পরের গলির দিকে। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন ইলা সাহার বাড়ির দরজায়। বললেন “ছেলেকে কম্পিউটার টা একটু শিখে নিতে বোলো। তারপর আমি দেখছি।”

প্রশ্ন করলাম এই যে বাড়ির মহিলারা এগিয়ে এসে নিজেদের অভাব অভিযোগ জানাচ্ছে, লাইট বা চাকরীর আব্দার করছে, এগুলো নিয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কি ভাবছেন ? “মন্ত্রী ফন্ত্রী বাদ দিন। এই মানুষগুলোর কাছে আমি স্রেফ ববি। আর এই যে এলাকাটা দেখছেন, এটা আমার পরিবারের ২০০ বছরের আস্তানা। এইখানেই এখনো আমাদের পরিবারের বাড়ি আছে, দোকান আছে। এই মানুষগুলো বলতে পারেন একপ্রকার আমার পরিবারের সদস্য। তারা মনে করে ববিকে বললেই তাদের কাজ হয়ে যাবে। আর জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমাদের কাজ‌ই তো মানুষের অভাব অভিযোগ শোনা।” ঘন্টা দেড়েক প্রচার পর্বে অবশ্য অভাব অভিযোগের পাশাপাশি “তোমাকেই ভোট দেবো” শুনে ববি হাকিম হেঁসে বললেন, “আমাকে নয়, এবার ভোট দিদিকে।”