Date : 2024-04-27

শান্তি ফিরেছে পাহাড়ে। এবার লক্ষ শিল্পায়ন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তেমন‌ই ইঙ্গিত

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পায়নকেই যে পাখির চোখ করেছেন সেকথা তিনি নিজমুখে বলেছেন বেশ কয়েকবার। সেই শিল্পায়ন শুধু সমতল কেন্দ্রিক না হয়ে যাতে দার্জিলিং পাহাড়েও হয় তারজন্যেও ভাবছে তাঁর সরকার। মঙ্গলবার দার্জিলিং এর সভায় মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তেমন‌ই ইঙ্গিত মিলল।

বছর কয়েক আগে এই পাহাড়েই বিশ্ববঙ্গ বানিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে চমকে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে পাহাড়ে যে এমন কোনো শিল্প সম্মেলন করা যায় তেমন ভাবনাই ছিলো না কার‌ও। তবে সেই শিল্প সম্মেলনের পর পাহাড়ের রাজনৈতিক অবস্থানের বেশকিছু বদল ঘটেছে। নতুন করে জিটিএ-র নির্বাচন হয়েছে। অনীত থাপার নেতৃত্বে নতুন দল বোর্ড গঠন করছে। এমন সময় পাহাড়ে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন আবার দার্জিলিং এ তিনি বানিজ্য সম্মেলন করতে চান। তবে এবারের শিল্প সম্মেলন হবে একেবারেই পাহাড় কেন্দ্রিক। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের একটা জায়গা তো আছেই। তার সঙ্গে শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সেক্টর, উদ্যানপালন সেক্টরে প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, “এইসব শিল্প করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা চাই, স্কিম চাই। হোম স্টে এখন যথেষ্ট ভালো চলছে। আমি লামাহাটায় এটা শুরু করেছিলাম। এখন দেখুন কত বেড়েছে। আমাদের সরকার হোম স্টে ব্যবসাকে সাহায্য করার জন্য ৬ শো জন মানুষকে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ইনসেনটিভ দিয়েছি।

আইটি শিল্পের জন্য দার্জিলিং সবচেয়ে ভালো জায়গা। দার্জিলিং কার্শিয়াং কালিংপং মিরিকে আইটি হাব হতে পারে।” পাহাড়বাসীকে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনারা যদি শান্তি বজায় রাখেন তাহলে আমি আইটি সেক্টরের সাথে জড়িত মানুষদের অনুরোধ করবো যাতে এখানে তারা বিনিয়োগ করেন।” তবে শুধু আইটি সেক্টর বা হোম স্টে নয়, স্কিল ডেভেলপমেন্টেও যে তাঁর সরকার গুরুত্ব দিতে চায় সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা কয়েকদিনের মধ্যে তিরিশ হাজার জনের চাকরির ব্যবস্থা করছি। এদের সবাইকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। আমরা দার্জিলিং এর চারটে পুরসভায় চারটে স্কিল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরি করবো। যেখানে পাহাড়ের ছেলে মেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে জব ফেয়ারের মাধ্যমে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি।” পানীয় জলের সমস্যা দার্জিলিং পাহাড়ের অন্যতম বড় সমস্যা। মুখ্যমন্ত্রী জানান ২০২৪ এর মধ্যে সরকার সব ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেবে। একথা বলার সময়েই একটা নতুন পথের হদিশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পাহাড়ে প্রচুর ঝর্না রয়েছে। সেইসব ঝর্নার জল কে যদি প্যাকেটজাত করা যায় তাহলে পাহাড়বাসীর একটা নতুন রোজগারের জায়গা খুলে যাবে।” মুখ্যমন্ত্রী তখন দার্জিলিং ও কালিম্পং এর জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা অনেক ভালো কাজ করছেন তবে দেখুন পাহাড়ের মানুষের জলের কষ্ট রয়েছে। প্রয়োজনে বটলিং প্ল্যান্ট এর মাধ্যমে ঝর্নার জলকে প্যাকেটজাত করা যায় কি না সেটা দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঝর্নার জল রিজার্ভারে জমিয়ে তারপর বটলিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে শুদ্ধ করে প্যাকেটজাত করা যায়। তিনি বলেন সুইডেন এই বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই পথে যদি সাফল্য আসে তাহলে আগামি দিনে কিন্তু পাহাড়ের অফুরন্ত ঝর্নার জল‌ই পাহাড়বাসীর জলের সমস্যা মেটাতে পারে। পাশাপাশি রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এখন তো বাইরে থেকে অনেকেই দৌড়ে বাংলায় চলে আসছেন। কারণ তারা জানেন বাংলা সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় জায়গা। যারা বাইরে থেকে গালি দেয়, তাদের শুধু গালি দেওয়াই কাজ। কিন্তু আমাদের বানতলায় ইউপি থেকে প্রচুর শিল্পপতি চলে এসেছেন। তারা ওখানে আসতে পারলে দার্জিলিং এ কেন আসবেন না ? কালিম্পং এ কেন আসবেন না ? মিরিকে কেন আসবেন না ? আমি তো চাই তাঁরা এখানেও আসুক। এখানে শিল্প গড়ুক।” তারপরেই পাহাড়ের অন্যতম চালিকা শক্তি মহিলাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পাহাড়ের মহিলারা এতকিছু করছেন। তাহলে পাহাড়ের মহিলারা গাড়ি চালাবেন না কেন ? যদি আপনারা বলেন তাহলে আমরা সরকারের থেকে গাড়ি কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থাও করে দিতে পারি।” একদিকে ইয়াং জেনারেশন, অন্য দিকে সব রাজনৈতিক দল, পাশাপাশি পাহাড়ের মহিলাদের মন জয়ের মাধ্যমে শান্তি বজায় রেখে পাহাড়েও শিল্পায়ন‌ই যে তাঁর এখন পাখির চোখ, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।