পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমান থেকে দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার মহকুমা শহর কাটোয়া থেকে দূরত্ব ৬ কিলোমিটার । এই দূরত্বে বর্ধমান – কাটোয়া’র মধ্যবর্তীতে অতি প্রাচীন এক বিরাট বড় গ্রাম যার নাম “শ্রীখণ্ড” । আয়তনে বড় হওয়ার জন্যই পূর্ব রেলের মানচিত্রে বর্ধমান – কাটোয়া রেল শাখায় এই গ্রামে আছে দুটি স্টেশন । একটি “শ্রীখণ্ড” ও অপরটি “শ্রীপাট শ্রীখণ্ড” । একই গ্রামে দুটি স্টেশন থাকলেও “শ্রীখণ্ড” গ্রামের বড় অংশের বাসিন্দারা ব্যবহার করেন “শ্রীপাট শ্রীখণ্ড” স্টেশনটি এবং গ্রামের কিছু অংশের বাসিন্দারা এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা ব্যবহার করেন “শ্রীখণ্ড” স্টেশনটি ।
“শ্রীখণ্ড” মূলত বৈষ্ণব প্রধান গ্রাম হলেও এই গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাক্ত ও শৈবের প্রতি ভক্তি ও প্রাচীন ইতিহাস । এই গ্রামে বৈষ্ণবদের বারো মাস ধরে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান থাকলেও বছরের সবথেকে বড় উৎসব গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে বড়ডাঙ্গার বিলাসকুঞ্জে “শ্রী শ্রী গৌর নরহরির মিলন মহোৎসব” । শ্রী শ্রী নরহরি সরকার ঠাকুরের বিরহ তিথি উপলক্ষ্যে কার্ত্তিকী কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে এই উৎসব হয়ে আসছে বিগত ৪৬০ বছর ধরে । শ্রীখণ্ড মধুমতী সমিতি (অধ্যক্ষ প্রকাশানন্দ ঠাকুর, সম্পাদক অনুপম ঠাকুর) আয়োজিত ৪৬১তম বছরে এই উৎসব এবার পালন হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর । ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্যে দিয়ে যে উৎসবের শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সেই উৎসব শেষ হবে । উৎসব উপলক্ষ্যেই ৭ ডিসেম্বর গ্রামের শ্রীমন্দির থেকে সংকীর্তন ও শোভাযাত্রা সহকারে বড়ডাঙ্গার গৌর নরহরির বিলাসকুঞ্জে নিয়ে আসা হয় শ্রী শ্রী গৌর গোপীনাথকে । তারপরে ৮ ডিসেম্বর চিঁড়া মহোৎসব ও ৯ ডিসেম্বর অন্ন মহোৎসব । ১০ ডিসেম্বর হবে ধূলোট উৎসব । এইদিন কুঞ্জভঙ্গ ও দধিহলুদের পরে সন্ধ্যায় শ্রী শ্রী গৌর গোপীনাথ ফিরে যাবেন বড়ডাঙ্গার গৌর নরহরির বিলাসকুঞ্জ থেকে গ্রামের মন্দিরে যেখানে বছরের বাকী ৩৬১ দিন তিনি অধিষ্ঠান করেন ।
শ্রীখণ্ড গ্রামের বড়ডাঙ্গার বিলাসকুঞ্জে “শ্রী শ্রী গৌর নরহরির মিলন মহোৎসব” উপলক্ষ্যে শ্রীখণ্ড মধুমতী সমিতির এই অনুষ্ঠানে কীর্তন পরিবেশন করতে আসেন দেশের নানা প্রান্তের কীর্তনীয়ারা । থাকেন গ্রামের বেশ কিছু কীর্তন সম্প্রদায় । এবছরের উল্লেখযোগ্য কীর্তনীয়ারা হলেন সোমা দাস, দীপঙ্কর কর্মকার, বেণুগোপাল দাস, অশোক গোস্বামী, কার্ত্তিক দাস, গৌরী পোদ্দার, পলাশ সরকার, অনুরাধা গোস্বামী, গৌরী পণ্ডিত, বিমল মণ্ডল, রঘুনাথ দাস বৈরাগ্য, বাপ্পাদিত্য মুখার্জী, নদিয়াচাঁদ বৈরাগ্য, মলয় বন্দোপাধ্যায়, অক্ষয় আচার্য্য, সুমিতা বিশ্বাস ও স্বরূপ দামোদর দাস বাবাজী । এছাড়াও আছেন শ্রীখণ্ডের নরহরি সম্প্রদায়, ভবানী মিস্ত্রী সম্প্রদায়, দক্ষিণ পাড়া সম্প্রদায়, বুড়ো মণ্ডল, অনাথ ঘোষ সম্প্রদায়, লালন ঘোষ সম্প্রদায়, কলিপাতা সম্প্রদায়, ভূতনাথতলা পাড়া সম্প্রদায় ও একচক্রাধামের নিতাইবাড়ি । অন্যদিকে “শ্রী শ্রী গৌর নরহরির মিলন মহোৎসব”-এ ভক্তিগ্রন্থ পাঠে আছেন শঙ্কর কুণ্ডু, কামিনী সরকার, কৃষ্ণেন্দু গোস্বামী, সুশোভ চক্রবর্তী, পার্থ গোস্বামী, ভাগবত গোস্বামী, কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী, সুলোচন মহান্ত ও দিলীপ রায় ।
শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙ্গার বিলাসকুঞ্জে “শ্রী শ্রী গৌর নরহরির মিলন মহোৎসব” কে কেন্দ্র করে বসে বিরাট মেলা, যেটা মুখে মুখে প্রচারিত “বড়ডাঙ্গা মেলা” নামে । সেখানে অনেক কিছুর মধ্যেও মেলার মূল আকর্ষণ বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান এবং তাদের তৈরী বড় বড় সাইজের মিষ্টি, কারোর পক্ষেই যে মিষ্টি একা পুরোটা খাওয়া বেশ কঠিন ।