Date : 2024-04-26

দেশি মদ আর আলুর চপেই সন্তুষ্ট হন এই দেবতা

ওয়েব ডেস্ক: তন্ত্র মতে কালীপুজোয় কারণ ও সিদ্ধি বহুল প্রচলিত। তন্ত্র মতে পুজোয় মাছ, মাংসের ব্যবহারের কারণে অনেকেই একে বীরাচারী পুজো বলে। তথাকথিত বৈদিক পুজোয় শুচিতাই মুখ্য উপাচার। কিন্তু লোকসংস্কৃতি বা ব্রতকথার মাধ্যমে প্রচলিত এমন পুজো আছে যেখানে বিশেষ বিশেষ নিয়ম দেখা যায়। কিন্তু কখনও শুনেছেন ফুল বেলপাতা, ফলমূলের মতো কোন দেবতার পুজোয় নৈবেদ্য হিসাবে পুরোহিতের উচ্ছিষ্ট খাবার অর্পন করা হয় দেবতাকে!

আর তাতেই নাকি সন্তুষ্ট হন এই দেবতা! এমনই পুজো প্রচলিত আছে রাঢ় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিচিত্র এই পুজো পদ্ধতির জন্য এই দেবতার নাম এঁটু ঠাকুর। ঝড়খন্ড ও বিহার লাগোয়া সীমান্ত গ্রাম জামতাড়, আম্বা গ্রামে প্রাচীন কাল থেকে এই দেবতার পুজো প্রচলিত হয়ে আসছে। এই গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই প্রাচীন জনজাতি বাদ্যকর-ডোম সম্প্রদায়ের। এদের অধিকাংশের কুলদেবী মনসা আর কুলদেবতা হিসাবে পুজো করা হয় এঁটু ঠাকুরের।

তথাকথিত শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ দিয়ে নয়, বরং এই পুজো করে থাকেন বাদ্যকর-ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরাই। বর্তমান এঁটু ঠাকুরের পুজারী সুখদেব বাদ্যকর। প্রচলিত কোন নারী বা পুরুষ দেবতা কল্পনা করে তৈরি করা হয়নি এঁটু ঠাকুরের মূর্তি।

তিনটে গোল গোল পাথর বসানো থাকে মূর্তি হিসাবে আর তার পাশেই রয়েছে মানতের ছলন অর্থাৎ মাটির দুটি ঘোড়া। আর থাকে একটি ত্রিশূল। হাতে লোহার চিমটে নিয়ে গোল সিঁন্দুরের টিপ আর গামছা পরে এঁটু ঠাকুরের পুজোয় বসেন পুরোহিত। মাঝে মাঝে নাকি তাঁর ভর হয় এঁটু ঠাকুরের।

এই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস এঁটুঠাকুর পুরোহিতের মধ্যে দিয়েই মানুষকে আর্শিবাদ করেন। ভাদ্র সংক্রান্তিতে শেষ হয় মনসা পুজো। তার ঠিক পরদিন ১ আশ্বিন পুজো হয় এঁটু ঠাকুরের। বরণ ডালায় রাখা আয়না, চিরুনি দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়ে পুজোয় বসেন পুরোহিত। ভোগ হয় ডাল জাতীয় খাবার দিয়ে।

আর প্রধান ভোগ হল আলুর চপ, দেশি মদের পাউচ এবাং সিগারেট। এই সবই প্রথমে পুরোহিত খেয়ে নেন বাকিটা নিবেদন করেন দেবতার পায়ে। ঝাড়খণ্ডি ভাষায় গান করে করে সারাদিন ধরে উচ্চারণ হয় এঁটু ঠাকুরের মন্ত্র। প্রসাদ পেতে বহুদূর গ্রাম থেকে এঁটুঠাকুরের ধামে আসেন মানুষ। মানত করে যান। পুজো পদ্ধতি যাই হোক, আসলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।